নিরন্তর সুখভোগ করতে মহানবমীর দিন নবদুর্গার এই রূপের পুজো করা হয়
এই দেবীর কৃপায় সমস্ত সিদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছেন ভগবান শঙ্কর। শিবের অর্ধেক শরীর দেবী দেহ হয়েছিল তাঁরই অনুকম্পাতে। সেই জন্যই তো দেবাদিদেব জগৎজুড়ে প্রসিদ্ধ অর্ধনারীশ্বর নামে।
রামচন্দ্র দুর্গাপুজোর পক্ষে অকাল বলেছিলেন শরৎকালকে, কেন? শরৎকাল, সূর্যের দক্ষিণায়ন। সমস্ত দেবদেবীর নিদ্রার সময়। অনন্যোপায় ভগবান ব্রহ্মা দেবী দুর্গাকে জাগরিত করলেন স্তবস্তুতি করে। দেবী তখন কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বললেন, বিল্বমূলে দুর্গার বোধন করতে। দেবীর আদেশ যথানিয়মে পালন করলেন পিতামহ ব্রহ্মা।
মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত নয়রাত্রি ব্যাপী দেবী দুর্গার নয়টি রূপ ও শক্তির যে আরাধনা করা হয় সেটিই নবরাত্রি ব্রত।
দেবী দুর্গার নয়টি রূপের নামকরণ করেছিলেন পিতামহ ব্রহ্মা। নয়টি নামের নয়টি বৈচিত্র্যময় রূপভেদ ও শক্তি। এঁরা প্রত্যেকেই দেবী দুর্গার নয়টি কায়াব্যূহ মূর্তি। এই নয়টি নামের উল্লেখ আছে শ্রীশ্রীচণ্ডীতে।
সিদ্ধিদাত্রী
সর্বপ্রকার সিদ্ধিদায়িনী দেবী সিদ্ধিদাত্রী তাঁর ভক্ত বা উপাসককে জাগতিক ও পারমার্থিক সমস্ত সিদ্ধি প্রদান করতে সমর্থ। দুঃখময় সংসার জীবনে থেকেও মানুষ নিরন্তর সুখভোগ করে মোক্ষলাভ করতে সক্ষম হয় দেবী সিদ্ধিদাত্রীর করুণালাভ হলে। দেবী দুর্গার নবমশক্তি ও রূপের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সিদ্ধিদাত্রীর দিব্যলোকে বিচরণ করতে সাধক সমর্থ হয় জাগতিক সমস্ত ইচ্ছা ও স্পৃহার উর্ধ্বে উঠে। উপাসক অলক্ষ্যে সাংসারিক বিষয় ভোগশূন্য হয়ে যায় তাঁর করুণা বিগলিত ধারা নিত্য গান করে। পরম প্রাপ্তি হয়ে যায় তাঁর নিত্য সেবাসান্নিধ্যে। এক সময় দেবী তাঁর ভক্ত বা উপাসককে নিয়ে যান পরম পদের পথে।
দেবীর ডানদিকের নিচের হাতে চক্র, উপরের হাতে ধরা রয়েছে গদা। বাঁদিকের উপরের হাতে প্রস্ফুটিত পদ্ম, নিচের হাতে শঙ্খ। দেবী কখনও পদ্মাসনে আসীন আবার কখনও তিনি সিংহবাহনা। দেবীর আরাধনা বা উপাসনা নবরাত্রির নবমদিনে করাই শাস্ত্রীয় বিধি। তবে প্রতিদিন নিষ্ঠা নিয়ে যারা তাঁর সাধনা করে, সকল সিদ্ধি তাদের করায়ত্ত হয় অনায়াসে।
আলোচিত সাধনৈশ্বর্য বা শক্তিবলে মানুষ সহজেই পারে অনেক অসাধ্য সাধন করতে। দেবী দুর্গার নবম শক্তি সিদ্ধিদাত্রী নামে পরিচিত। নবরাত্রি ব্রতে নবদুর্গার মধ্যে দেবীর শেষ বা অন্তিম রূপটি হল সিদ্ধিদাত্রী। ভক্ত সাধক বা উপাসক শুক্লা প্রতিপদ থেকে অষ্টমী পর্যন্ত দেবী দুর্গার আটটি রূপের পুজো করে সিদ্ধিদাত্রীর উপাসনায় প্রবৃত্ত হন নবম দিনে।
দেবী পুরাণের কথায়, এই দেবীর কৃপায় সমস্ত সিদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছেন ভগবান শঙ্কর। শিবের অর্ধেক শরীর দেবী দেহ হয়েছিল তাঁরই অনুকম্পাতে। সেই জন্যই তো দেবাদিদেব জগৎজুড়ে প্রসিদ্ধ অর্ধনারীশ্বর নামে।
দুঃখময় এই সংসার জীবনে নির্লিপ্ত ও নির্বিকার থেকে জাগতিক সমস্ত সুখভোগ করে সিদ্ধিদাত্রীর উপাসক সক্ষম হয় মোক্ষলাভ করতে, পরমপদ লাভ হয় তাঁরই অপার অনন্ত করুণায়।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : ‘নবদুর্গা’ অনুবাদিকা গায়ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর। ছবি এঁকেছেন পরমেশ এবং বি.কে. মিত্র। এদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম ক্ষমা প্রার্থী হয়ে। সহায়ক গ্রন্থ শ্রীশ্রীচণ্ডী। এছাড়াও শাস্ত্রীয় শিক্ষাগুরু স্বর্গীয় জ্ঞানদাপ্রসাদ চৌধুরী। কৃতজ্ঞতা ভাষা বা লেখায় প্রকাশ করা যায় না। এ অন্তরের এক আনন্দময় অনুভূতি যে। – শিবশংকর ভারতী, ছবি – সৌজন্যে – গীতা প্রেস, গোরক্ষপুর