World

‘ঋতুস্রাব’-এর দিনে ‘ছৌপদী’ বন্দি তরুণীর জীবন কাড়ল বদ্ধ ঘর

‘ঋতুস্রাব’ নারীদের জীবনে একটি প্রাকৃতিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। অথচ সেই প্রাকৃতিক ঘটনাই নেপালের পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রামের মানুষের চোখে ‘অপবিত্র’ ‘অচ্ছুৎ’। তাই ওই গ্রামের যে মেয়ে ঋতুমতী হন, তাঁকে তাঁর পরিবার ঐ বিশেষ দিনগুলোতে ত্যাগ করে। মাসের নির্দিষ্ট দিনগুলিতে ঋতুমতীদের বন্দি থাকতে হয় একটি ঘরে। সেই ঘরকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘ছৌপদী’। প্রায় আলোবাতাসহীন বদ্ধ কুঠুরিতে মাসিকের দিনগুলোতে সংযমী জীবনযাপন করতে হয় মেয়েদের। এমনকি যে সময়ে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার, ঠিক সেই সময়েই পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত রাখা হয় ঋতুমতীদের। ঠান্ডার সময়েও মেলে না গায়ে দেওয়ার কম্বলটুকু। তাই প্রবল শীতে শরীর গরম রাখতে গত সোমবার বদ্ধ ঘরে আগুন জ্বালিয়েছিলেন আচাম জেলার তুরমাখাদ গ্রামের বাসিন্দা গৌরী বায়েক নামে এক তরুণী। আগুন জ্বালিয়ে তিনি সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। বদ্ধ ঘরে ধোঁয়ার কারণে পরে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। এমনটাই অনুমান পুলিশের। তার উপরে অপুষ্টি, পরিবারের অবহেলা, সর্বোপরি অস্বাস্থ্যকর দমবন্ধ পরিবেশ তো ছিলই। এই সবকিছু কেড়ে নিল গৌরী বায়েকের তরতাজা জীবন। এমনটাই দাবি গ্রামবাসীর। তবে গৌরী প্রথম নয়। ‘ছৌপদী’-তে এর আগে ২০১৭-তেও ২ জন ঋতুমতীর মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে নেপালেই।

একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে নেপালের বেশ কিছু প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন, ঋতুস্রাব অশুচির বিষয়। ওই সময় নিজেদের ঘরের মেয়েকে ‘ছৌপদী’ কুটিরে থাকতে বাধ্য করেন পরিবারের লোক। যদিও এই মধ্যযুগীয় বর্বর প্রথা এখন নেপালে আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু মানুষের মনের অন্ধ বিশ্বাস না পাল্টালে যে পরিবর্তন সম্ভব নয়, তা প্রমাণ করল গৌরীর অকালমৃত্যু। কিছুদিন পরে এই জানুয়ারিতেই মুক্তি পেতে চলেছে অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘প্যাডম্যান’। যেখানে মেয়েদের ঋতুস্রাবকে সুরক্ষিত করার জন্য একজন পুরুষের সংগ্রামের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। ‘প্যাডম্যান’ মুক্তির আগে মেয়েদের ঋতুস্রাব নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কারের নির্মম মুখ আরও একবার প্রশ্ন তুলে দিল। এত প্রচার, বিজ্ঞাপন কি সত্যি মানুষের মনের কালো মেঘ মুছে দিতে পারছে? প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে।



Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button