মধ্যপ্রাচ্য থেকে যাত্রা শুরু করা ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি ওতপ্রোতভাবে মিশে গিয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মজ্জায়। ইতিহাসের পাতার চন্দ্রগুপ্তই হন বা কনিষ্ক, ক্যালেন্ডারের গুরুত্ব ঠিকই উপলব্ধি করেছিলেন তাঁরা। অন্যদিকে হিটলার থেকে জন লেননের কাছে ডায়েরি হয়ে উঠেছিল তাঁদের জীবনের অন্যতম অঙ্গ। বিখ্যাত ব্যক্তিত্বই শুধু নয়, আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই ডায়েরি ও ক্যালেন্ডার একটা আলাদা জায়গা দখল করে রেখেছে।
কলকাতার বুকে আমাদের জীবনের বিশ্বস্ত এই দুই সঙ্গীর খাস তালুক হল নিউমার্কেট। নতুন বছর যত এগিয়ে আসে, ততই মানুষ খোঁজ করেন হরেকরকমের ডায়েরির। আর পয়লা জানুয়ারির মধ্যে একটা ক্যালেন্ডার যদি না জোগাড় হয়ে ওঠে তাহলে মনটা খুব খুঁতখুঁত করে। তাই ডায়েরি-ক্যালেন্ডারের হালহকিকত জানতে পূর্বতন ব্রিটিশ আমলের হগ সাহেবের বাজারই ভরসা।
স্থানীয় দোকানি সাদিক আলমের সম্ভারে ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০ টাকার ব্র্যান্ডেড, কেতাদুরস্ত ডায়েরি রয়েছে। রয়েছে খাঁটি চামড়ার কভারওয়ালা ডায়েরিও। তাঁর দোকানে বেশ কিছু ঝোলানো ক্যালেন্ডারও চোখে পড়ল।
জাফর ফিরোজের দোকানে রংবেরঙের ডায়েরি আর ক্যালেন্ডারের সারি ক্রেতাদের মুগ্ধ করবেই। মধ্যবিত্তের নাগালে থাকা ১০০ বা ১৫০ টাকার রেঞ্জের ডায়েরি যেমন রয়েছে, তেমনই তার পণ্যসম্ভারে উঁকি দিচ্ছে নাইটিংগেল বা ইন্ডিয়া টুডের মতো নামীদামী ব্র্যান্ড। আবার রয়েছে ১০ টাকা মূল্যের পকেট ডায়েরিও। বাঙালির চিরাচরিত দেবদেবীর ছবি আঁকা ক্যালেন্ডারের পাশেই শোভা পাচ্ছে মনীষীদের ছবি সম্বলিত বর্ষপঞ্জি।
মাত্র ১০০ টাকায় যদি বিশাল আকারে ভগবানকে পেতে চান তাহলে আপনাকে আসতেই হবে মহম্মদ শাহনওয়াজ হুসেনের দোকানে। বিশালাকার ভগবানের ছবি আঁকা সুদৃশ্য ক্যালেন্ডার তিনি বেচছেন ১০০ টাকায়। তাঁর দোকানেই চোখে পড়ল ঘড়িওয়ালা টেবিল ক্যালেন্ডার। পকেটে সামান্য রেস্ত থাকলেই কিনে ফেলা যায় নতুন বছরের এই সামগ্রি, দাম মাত্র ৬০ টাকা। বাজার চলতি মাপের ক্যালেন্ডারের দাম ১০ টাকা। যদি কেউ ৫০ বা ১০০টি অর্ডার করেন তাহলে প্রতি পিস দাম পড়ে ৮ টাকার মতো।
আমরা অনেকেই কমবেশি ডায়েরি লিখে থাকি। জীবনের সোনালি মুহুর্ত, প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে ঝগড়া, মা-বাবার ওপর অভিমান, কোনও কিছু না পাওয়ার হতাশা সবই বিশ্বাস করে আমরা যে বন্ধুদের বলতে পারি তার মধ্যে অন্যতম ডায়েরি। উল্টোদিকে সারাবছরে আমাদের অনেক উত্থান পতনের সাক্ষী থাকে ক্যালেন্ডার। বর্তমান স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ-ট্যাবের দাপটেও বাড়ির বড়রা এখনও নানান দৈনিক হিসেব রাখতে ক্যালেন্ডারে দাগিয়ে রাখেন। তাই নতুন বছরের প্রাক্কালে যদি এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চান তাহলে আপনাকে ঢুঁ মারতেই হবে নিউমার্কেটে। রাস্তার দুধারে ঢালাও পসরার মাঝে খানিক দামদর করে কিনে নিতে পারবেন আপনার রোজনামচার সঙ্গীদের।