নীলষষ্ঠী উৎসব কি ও কেন পালন করা হয়
চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন হয় নীলপুজো বা নীলষষ্ঠী। যেসব মহিলার সন্তান রয়েছে তাঁরা অন্যান্য ষষ্ঠী পুজোর মতই উপবাস করে নিষ্ঠার সঙ্গে শিবের পুজো দেন।
দক্ষকন্যা সতীর দেহত্যাগের পর শিব রাগে অন্ধ হয়ে স্ত্রীর দেহ কাঁধে করে তাণ্ডব নৃত্য করেন। অবশেষে সতীর দেহ সুদর্শনে খণ্ড খণ্ড করে শিবকে শান্ত করেন শ্রীবিষ্ণু। সে কাহিনি সকলের জানা। এদিকে সতীর দেহত্যাগে শিব তখন শোকাহত।
সে সময়ে নীলধ্বজ রাজার বেল গাছে ভরা বনে এক সুন্দরী মেয়ে রূপে আবির্ভূত হন সতী। নীলধ্বজ রাজা সেই মেয়েকে নিজের কন্যা মেনে তাঁকে গ্রহণ করেন। তাঁকে বড় করে তোলেন। সেই কন্যার নাম হয় নীলাবতী।
একসময়ে শিবের সঙ্গে নীলাবতীর বিয়ে দেন রাজা। রাজা নীলধ্বজের সেই বড় আদরের পালিত কন্যা নীলাবতী ও শিবের বিয়েই পরবর্তীকালে নীলষষ্ঠী নামে পরিচিত হয়। এটাই লোকশ্রুতি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এ কাহিনি মানুষের মুখে মুখে ঘুরেছে। গ্রাম বাংলায় এখনও কান পাতলে এ কাহিনি শোনা যায়।
চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন হয় নীলপুজো বা নীলষষ্ঠী। যেসব মহিলার সন্তান রয়েছে তাঁরা অন্যান্য ষষ্ঠী পুজোর মতই নীলষষ্ঠীতে উপবাস করে নিষ্ঠার সঙ্গে শিবের পুজো দেন। তবে নীলের মূর্তি কিন্তু আসলে তৈরি হয় নিম বা বেল কাঠ দিয়ে।
লাল কাপড়ে মুড়ে সেই নীলের মূর্তি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘোরার রীতিও এখনও পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের অনেক গ্রামে প্রচলিত। নীল সন্ন্যাসীরাই বাড়ি বাড়ি ঘোরেন।
নীলের দিন কলকাতা তো বটেই এমনকি গ্রামেগঞ্জেও সং বার হওয়ার রীতি রয়েছে। কলকাতার জেলে পাড়ার সং এখনও মানুষকে নাড়া দেয়। শিব-পার্বতী সেজে ঢাকঢোলের সঙ্গে সংয়েরা বার হন রাস্তায়। বিভিন্ন পাড়া পরিক্রমা করেন। রাস্তায় নাচ গানের মধ্যে দিয়ে এই সং দেখার জন্য বহু মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন।
নীলপুজো উপলক্ষে বিশেষ গানও রয়েছে। তাকে অষ্টক গান বাল হয়। ফলে গানে, উৎসবে, পুজোয় নীলষষ্ঠী বাঙালি জীবনে এক অন্য মাত্রা এনে দেয়। শহর কলকাতাতেও নীলপুজো সাড়ম্বরেই পালিত হয়।
সকাল থেকেই শিব মন্দিরগুলিতে উপচে পড়ে ভিড়। ফুল থেকে ফল, বিশেষত বেলের চাহিদা এদিন থাকে চূড়ান্ত। পুজোর থালা হাতে বহু মহিলাকেই এদিন মন্দিরের সামনে দেখা যায়।