হিং-টিং-ছট, গিলি-গিলি-গে!
কিংবদন্তী পিতার সুযোগ্য সন্তান তিনি। তাঁর বয়স বাড়ে, কিন্তু তিনি সকলের কাছেই জুনিয়ার। চিরন্তন জুনিয়র। আজি হতে শত বর্ষ পরেও তিনি জুনিয়রই থাকবেন।
একজন জাদুকরের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম। আর ফিরেছিলাম এক গভীর দর্শনের পাঠ নিয়ে। এমন এক সাক্ষাৎকার আগে নিয়েছি বলে তো মনে পড়ছে না। প্রতি বার কারও সাক্ষাৎকার নিয়ে বেরিয়েই ভাবতে শুরু করি লেখাটা এখান থেকে শুরু করলে মন্দ হয়না। কিন্তু বিশ্বাস করুন এই সাক্ষাৎকারের শুরুটা বিন্দুমাত্র ভেবে করলাম না। বলা ভাল করতে পারলাম না। একটা মানুষ যখন নিজের অন্তরের গভীরে লুকিয়ে থাকা জীবন দর্শনটাকে প্রাণ খুলে বলতে শুরু করেন তখন তাঁকে স্ক্যান করা কারো পক্ষেই সম্ভব হয়না। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হল না। তবু চেষ্টা করলাম তাঁর সেই জীবনকে দেখার দৃষ্টিকোণটাকে যতটা সহজ করে বলা যায় বলার।
জুনিয়র পি সি সরকার। কিংবদন্তী পিতার সুযোগ্য সন্তান বলতে যা বোঝায়, তিনি তাই। তাঁর বয়স বাড়ে, কিন্তু তিনি সকলের কাছেই জুনিয়ার। চিরন্তন জুনিয়র। আজি হতে শত বর্ষ পরেও তিনি জুনিয়রই থাকবেন। অবিচ্ছেদ্য কবচকুণ্ডলের মত যাঁর সত্তার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে এই জুনিয়র তকমাটা। আর সেই তকমা চিরকাল শুধু তাঁকেই বাঁচিয়ে রাখবেনা, বাঁচিয়ে রাখবে তাঁর পিতা জাদুসম্রাট সিনিয়র পি সি সরকারকেও।
ম্যাজিককে বিজ্ঞান ভিত্তিক কৌশল বলায় ঘোর আপত্তি তাঁর। কেন? আমরা তো একে বিজ্ঞানের কৌশল বলেই জানি! মুখ খুললেন জুনিয়র সরকার। অতি গভীর জীবন দর্শনের কথাটা বলার সময়ও যাঁর মুখে চিরন্তন মিষ্টি হাসিটা লেপটে থাকে। ‘সবার স্বপ্নই তো জাদুকর হওয়া। তাইনা! জাদুকর হওয়াটাই তো সকলের লক্ষ্য। হকির জাদুকর, ফুটবলের জাদুকর! কি তাই না? তবেই তো একজন তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন। যাই করুন। জাদুকর হওয়ার লড়াই আপনাকে লড়তেই হবে’।
‘ম্যাজাই কথাটা থেকেই ম্যাজিক কথাটা এসেছে। ম্যাজাই মানে ‘সৎ মানুষের শিল্প।’ জ্ঞানের প্রকাশকে অজ্ঞানের কাছে পৌঁছে দেওয়াই তো ম্যাজিক।’ বলে চলেছেন পি সি সরকার জুনিয়র। ’যে চিন্তা নিয়ে ছিলাম তাকে গুলিয়ে দেয় ম্যাজিক। অজানাকে সামনে এনে দেওয়া। জেনে গেলে তো আর ম্যাজিক থাকে না। তাই না? পূর্বতন অভিজ্ঞতাকে, জ্ঞানকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে ম্যাজিক। যা হয়ে থাকে তা তো হবেই, যা হয়না তাই তো ম্যাজিক! ভুল তবু নির্ভুল, সেটাই তো ম্যাজিক! কবিগুরু বলেছিলেন, ৫ গুণ ৭, ৩৫-এ মজা নেই। আসলে কি জানেন বাস্তবকে না জানলে অবাস্তবকে জানা যায়না। আর সেই অবাস্তবটাই তো ম্যাজিক।’ বিভোর হয়ে শুনতে শুনতে হঠাৎ মনে হল আমি প্রশ্ন করতে ভুলে গেছি। শুধু সামনে মানুষটার দিকে চেয়ে আছি। তাহলে কি এটাই ম্যাজিক!
‘যখন মায়ের পেটে ছিলাম তখন তো আমাকে নিজেকে কষ্ট করে খেতেও হয়নি। তবু কেমন তৈরি হয়ে গেলাম। আসলে মহাকালের কর্পোরেশনে যে প্ল্যান একবার পাস হয়েছে তা তো হবেই। তাকে ঠেকায় কার সাধ্য! শুধু যেদিন ভূমিষ্ঠ হলাম সেদিন মা বললেন, যা, তুই আলাদা। একটা আলাদা সত্ত্বা। যাকে অনেক কিছুই নিজেকে করতে হবে।’ মানব জন্মের এমন ব্যাখ্যা সত্যিই অন্যভাবে ভাবতে বাধ্য করল। তাহলে কি এটাই ম্যাজিক!
পি সি সরকার আমার সামনে বসে বিভোর হয়ে গেছেন। একটু আগে কথা প্রসঙ্গে নিজেই বলছিলেন, ‘একজন জাদুকরকে বড় মাপের অভিনেতা হতে হয়। ম্যাজিক মানেই তো অভিনয়। অভিনয় ছাড়া ম্যাজিক হয় নাকি’? কেমন একবার মনে হল আমার সামনে বসে এই যে একটা মানুষ অনর্গল জীবন দর্শনের গভীর তত্ত্বগুলোকে নিয়ে নাড়াচাড়া করে চলেছেন। তিনি কি আসলে অভিনয় করছেন? আমি নিজে সাংবাদিক। ফলে পিঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে আসল মানুষটাকে বের করে আনার চেষ্টাটা মজ্জায় ঢুকে গেছে। লক্ষ্যে পৌঁছতে একটা আপাত জোলো প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম। ‘আচ্ছা আপনার জীবনের সবচেয়ে সুখের আর দুঃখের ঘটনা কি’? একজন ধ্যানমগ্ন মানুষের তাল কেটে দিলে, একজন কবির কবিতার ছন্দ কেটে গেলে, এক কণ্ঠশিল্পীর সুরের তাল কেটে গেলে যেভাবে চারদিকটা নিয়ে তাঁর একটা তাৎক্ষনিক ক্ষোভ জন্মায়, সেটা স্পষ্ট চোখে মুখে ফুটে উঠল আমার সামনে বসা জাদুকরের। ‘আপনি বড্ড বস্তুকেন্দ্রিক কথা বলছেন।’ বেশ ক্ষুণ্ণ স্বরেই বললেন তিনি। ‘কি বলব? আমাকে লজেন্স দেয়নি, বাবার মৃত্যু, পরীক্ষায় খারাপ করেছি।’ সবই তো দুঃখের। তবে হ্যাঁ, আপনার অন্য প্রশ্নটার উত্তর দিতেই পারি। আমার সুখের কথা। আমি ঠিক করেছি ১২৫ বছরে মারা যাব, তার আগে নয়। এর আগে যদি কেউ মরতে বলে তাহলে মরতে হয় সে মরুক।’ হেসে উঠলেন রসিক মানুষটি। কিন্তু হাসির ছলে যা বললেন তাও তো সেই জীবন দর্শনই। বুঝলাম, রসিকতার মধ্যে দিয়েও কিন্তু নিজের ভাবনায় অটল তিনি। সেই একদম অন্য মুডের অজানা পি সি সরকারকে আরও ভাল করে জানার কৌতূহলটা হঠাৎই আরও বেড়ে গেল।
‘ছোটবেলায় ধারণা ছিল আমার দুটো বাবা! একটা বাবা সারাদিন বাড়িতে খিটখিট করে, বকে। তার নাম বাবা। আর একটা বাবা স্টেজে থাকে। সবসময় হাসে। ভাল ভাল কথা বলে। পড়তে বসতে বলে না। সেই বাবাটার নাম পি সি সরকার। আমি ওই বাবাকে বেশি ভালবাসতাম। আর যখন কেউ বলত দু’জনেই আসলে একই মানুষ। তখন ব্যাপারটা ভীষণ জটিল লাগত! যে বাবাকে ভালবাসতাম না, তিনি আমাকে কোনও দিন মেরেছেন কিনা মনে নেই। তবে কেন মারেননি তা নিয়ে দুঃখ আছে। হয়তো মারলে আরও শুধরতাম, আরও ভাল হতাম।’ কথাগুলো বলতে বলতেই হাসছিলেন পি সি সরকার জুনিয়র। কিন্তু আমার হাসি পেল না। কেমন বিভোর হয়ে আছি। তবে কি আমার সঙ্গেও ম্যাজিক হচ্ছে। কি জানি!
‘বাবা কিভাবে পি সি সরকার হয়ে যান তা দেখার ভীষণ ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পারমিশন ছিলনা। বাবা যে ঘরে সাজতেন বা অনুশীলন করতেন সেই ঘরে ঢোকার অনুমতি কারও ছিলনা। কারণটা ছিল মনঃসংযোগে বিঘ্ন। কেউ ঢুকলে মনঃসংযোগে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা থেকেই যায়। কিন্তু আমার কৌতূহল ছিল। তাই একটা উপায় বের করলাম। বাবার ওই গোপন ঘরের পাশের ঘরে একটা ঘুলঘুলি ছিল। স্কুল থেকে ফিরে লুকিয়ে একটা টুলের ওপর পা দিয়ে আলমারির ওপর চড়তাম। তারপর আলমারির মাথায় বসে ওই ঘুলঘুলিতে চোখ রাখতাম। দিনের পর দিন এমন করেছি। দেখেছি বাবা কেমন করে অনুশীলন করেন। কেমন করে সহকারীদের শেখান কি করতে হবে। আর বাবা বিকেলে বেরিয়ে গেলে অন্য একটা দরজা দিয়ে লুকিয়ে ঘরে ঢুকে পড়তাম। মনে হত আমার গায়ে বাবার সেই ঝলমলে পোশাক! আমি বাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতাম। চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতাম হাজার হাজার মানুষ আমার ম্যাজিক দেখছেন। বিশাল আলোর ফোকাস আমার উপর। আমি ম্যাজিক দেখাচ্ছি। তারপর হঠাৎ সব তাল কেটে যেত। বাইরে গাড়ির আওয়াজে বুঝতে পারতাম বাবা এসে গেছেন। তখন সব আলো নিভে যেত। আমিও হাফ প্যান্ট পড়া সেই বাচ্চা ছেলেটা হয়ে যেতাম। লুকিয়ে বেরিয়ে আসতাম ঘর থেকে।’ বিশ্বাস করুন আমি কোনও প্রশ্ন করতে পারছিলাম না। একটা মানুষ তাঁর অন্তরের কোন গভীরে লুকিয়ে থাকা অন্য একটা মানুষকে আমার সামনে উন্মোচিত করে চলেছেন। আর আমি শুনছি, শুনছি, আর শুনছি।
‘সেবার শুনলাম বাবার সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে সহকারিদের খুব ঝগড়া হচ্ছে। একদিন পরেই শো। সেই সুযোগ নিয়ে এককথায় সহকারীরা বাবাকে ব্ল্যাকমেল করছে। বাবা খুব রেগে তাদের তাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু ম্যাজিক দেখানোর সময় সহকারী ছাড়া কাজ করা মুশকিল। আমি গিয়ে দাঁড়ালাম বাবার সামনে। বললাম আমি সব জানি কি করতে হবে। কিভাবে তা রপ্ত করেছি তাও বাবার কাছে স্বীকার করলাম। বাবা তো অবাক! বললেন তুই পারবি? তখনি পরীক্ষা নিলেন। আমার সবই জানা। ফলে সহজে পাসও করে গেলাম। বাবা খুব হাসলেন। পরদিন নিউ এম্পায়ারে প্রথম স্টেজে উঠলাম বাবার সঙ্গে। কিন্তু প্রথম দিন হলেও স্টেজে কোনও অসুবিধা হল না। বাবার ঘরে যে হাজার হাজার দর্শকের সামনে রোজ বিকেলে ম্যাজিক দেখাতাম তার তুলনায় এই হলে দর্শকের সংখ্যা তো অনেক কম। তাই কোনও জড়তাই কাজ করল না আমার’।
‘এরপর দিন কাটছে। বাবা তখন জাপানে। আমি কলকাতায় পরীক্ষা দিচ্ছি। এমন সময় সেই খবরটা এল। বাবা আর নেই। জাপানেই শোয়ের পর বাবার মৃত্যু হয়েছে। উড়ে গেলাম জাপানে। বাবা আর নেই। পি সি সরকার আর নেই। তবু শো আছে। বাবা আছেন। সেদিন সন্ধ্যায় বাবার সিডিউল্ড শো হল। আমি বাবার মৃত্যুর সময়ের ঘামে ভেজা সেই জামাটা পড়ে শো করলাম। সেদিন স্পষ্ট অনুভব করলাম বাবার জামাটা আমার গায়ে চড়ানো নেই। বাবা নিজেই আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন। অন্তর থেকে অন্তর বাদ দিলেও অন্তরটা থেকেই যায়! সেভাবেই বাবাও থেকে গেলেন’।
‘জাপান থেকে ফিরে প্রথমেই সেই দেওয়ালটা ভেঙে দিয়েছিলাম। সেই দেওয়ালটা, যার ঘুলঘুলি দিয়ে বাবার অনুশীলন রপ্ত করেছিলাম আমি। দেওয়াল ভাঙার পারমিশন দিয়েছিলেন মা। আর আমার সামনে যে টেবিলটা দেখছেন। এটা বাবার সেই টেবিল। যেখানকার একটা জিনিসও এদিক ওদিক হওয়া বাবার পছন্দ ছিলনা। বাবার সেই টেবিলটার উপর শুধু একটা খাপ পরিয়ে দিয়েছি। যাতে সেটা নষ্ট না হয়। আর টেবিলের সঙ্গে যে ড্রয়ারগুলো ছিল, যেখানে বাবার জাদু দেখানোর লুকোনো জিনিস থাকতো। সেগুলো যেমন বন্ধ ছিল, আজও তেমনভাবেই বন্ধ করে রেখেছি। কোনও দিন খোলার চেষ্টাও করিনি। বাবা মারা যান ১৯৭১ সালের ৬ই জানুয়ারি। ৪১ বছর কেটে গেছে। তবু বাবা বেঁচে আছেন। বেঁচে থাকবেন’।
‘কিছুকাল আগের কথা। মা একদিন আমায় ডাকলেন। জিজ্ঞেস করলেন কোথায় শো চলছে। বললাম। কিন্তু তারপর যে কথাটা বলেছিলেন তা শুনে চমকে উঠেছিলাম। বললেন কোনও অবস্থাতেই যেন শো বন্ধ না হয়। তবে আমি কাল চলে যাব। তোমার বাবা অনেকদিন একা একা কষ্ট পাচ্ছেন। তাঁকে কথা দিয়েছিলাম, তিন ছেলেকে দাঁড় করিয়ে তবে আমার ছুটি। তোমরা তিনজনই দাঁড়িয়ে গেছ। এবার আমি যেতে পারি। কিন্তু তুমি শো বন্ধ করবে না। তাহলে তোমার বাবা খুব কষ্ট পাবেন। মা যেদিন মারা গেলেন আমি তখন শো করছি। ভায়েরা গিয়ে দাহ করেছিল। আমি যাইনি। কিন্তু এখন এখানে বসেও দেখতে পাচ্ছি বাবা মায়ের পাশে বসে আছেন। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।’ কথাগুলো বলার পর এবার একটু চুপ করলেন সদা হাস্যমুখের মানুষটি। গলাটা কি ধরে এসেছে! অন্তরের কোনও গভীরে লুকিয়ে থাকা কথাগুলো কি তাঁকে ভিতরে ভিতরে কাঁদাচ্ছে? এটুকু অনুভূতি তাঁর কাছ থেকে কাড়তে পারলাম না। সহজ হওয়া পর্যন্ত আমিও চুপচাপ অপেক্ষা করলাম।
‘১৯৬৯ সাল। কলামন্দিরে ম্যাজিক দেখাচ্ছি। বাবা সেই শো লুকিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন। আমি জানতাম না। তার দু’বছর পর বাবা মারা গেলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর মা একদিন সেকথা আমায় বলেছিলেন। খুব উত্তেজনা হয়েছিল। আমার শো দেখে বাবা কি বলেছিলেন তা শোনার জন্য মাকে চেপে ধরলাম। প্রশংসা করলেন? নাকি খারাপ বললেন? কি বললেন তা জানার জন্য মনটা আকুলি বিকুলি করতে লাগল। কিন্তু মা সেদিন যা বললেন তা আজও ভুলতে পারিনি। মায়ের সেই কথা এখনও কানে বাজে’। ‘সেদিন শো দেখে ফেরার পর তোর বাবা আমাকে একটাই কথা বলেছিলেন, এবার আমি শান্তিতে মরতে পারি’।
একটা মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে কিভাবে তাঁর পিতা মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে পারেন, কিভাবে আজও সবার অলক্ষ্যে পিতার স্মৃতি, দর্শন তাঁর বুকের মধ্যেটাকে দুমড়ে মুচড়ে শুদ্ধ করে দেয়। কিভাবে তাঁর অন্তরাত্মা পিতার বিরহে কেঁদে ওঠে তা সেদিন চোখের সামনে বসে অনুভব করলাম। আর সবশেষে ফের সেই ম্যাজিক। ‘মেস বাড়িতে থেকে, সারাদিনের লাঞ্চ, ডিনার সবই পকেটে রাখা ছোলা ভাজা দিয়ে সেরে, বাবা তখন জীবন গড়ার লড়াই চালাচ্ছেন। প্রবল অর্থাভাব। সেই সময় ওয়েলিংটনে বাবার এক দোকানদার বন্ধু ছিলেন। তিনি একদিন বাবার অবস্থা দেখে বললেন ওসব ম্যাজিক ট্যাজিক দিয়ে কিছু হবে না। একটা মাস মাইনের চাকরি কর। একটা স্কুলে মাস্টারমশাইয়ের চাকরি আছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁর চেনা। পরদিন তিনি দোকানে আসবেন। সেখানেই বাবাকে যেতে বললেন ওই দোকানদার বন্ধু। বাবা গেলেনও। বাবাকে পছন্দও হল ওই প্রধান শিক্ষকের। ওখানেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ধরিয়ে দিলেন। কি অদ্ভুত, ঠিক সেই সময়ই গভর্নরের বিদায়ী সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে ম্যাজিক দেখানোর চিঠি নিয়ে এক ব্যক্তি বাবাকে খুঁজতে খুঁজতে এসে হাজির ওই দোকানে। বাবা তাঁর হাত থেকে ম্যাজিক দেখানোর চিঠিটি নিয়ে হাসি মুখে শিক্ষকের চাকরির চিঠিটি প্রধান শিক্ষকের হাতে তুলে দিলেন। তারপর ম্যাজিক দেখানোর ডাক পাওয়া সেই চিঠিটি তাঁর সামনে তুলে ধরে বললেন, এটাই আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার। একে ম্যাজিক ছাড়া কি বলবেন’?
জুনিয়র পি সি সরকার থামলেন। আমিও থামলাম। সাক্ষাৎকার শেষ। চিত্রগ্রাহক বন্ধুকে সঙ্গে করে সেই জাদুবাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ন্ত বিকেলের রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। মনে হল কি করলাম আজ? আদৌ কি কোনও সাক্ষাৎকার আমি আজ নিলাম? নাকি একটা মানুষ তাঁর নিজের ইচ্ছেয় আমাকে হাঁটালেন নিজের পথে। তাঁর শব্দের জাদুতে আমাকে আসলে সম্মোহিত করে রাখলেন বেশ কিছুক্ষণ। তবে কি একেই বলে ম্যাজিক!