National

ভাঙচুর, ইটবৃষ্টি, আগুন, অবরোধ, মুক্তির আগেই ‘পদ্মাবত’ বিরোধ তুঙ্গে

রাত পোহালেই মুক্তি পাবে ‘পদ্মাবত’। ‘পদ্মাবত’-এর সেই আত্মপ্রকাশের পথ কি আদৌ ‘সুগম’ করতে পেরেছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ? বুধবারই সেই প্রশ্নের কিছুটা উত্তর কিন্তু পেয়ে গেলেন দেশবাসী। বুধবার সকাল থেকেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে শুরু হয়ে যায় করণী সেনার তাণ্ডব। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দফায় দফায় চলতে থাকে সহিংস বিক্ষোভ। মুখে ‘পদ্মাবত’ বিরোধী স্লোগান। পদ্মাবত ব্যান করার দাবি।

একের পর এক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বাস, গাড়ি। অবস্থা সামলাতে ময়দানে পুলিশ নামলে তাঁদের লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় ইট। করণী সেনার মারমুখী সেই মেজাজের কোপ থেকে প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে থাকেন সাধারণ মানুষ। ঝপ ঝপ করে দোকানদাররা নামিয়ে দিতে থাকেন দোকানের ঝাঁপ। মাথার উপর সূর্য উঠতেই কার্যত শুনশান হয়ে পড়ে গুজরাট, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের অনেক জায়গা।


‘পদ্মাবত’ দেখালেই জ্বালিয়ে দেওয়া হবে প্রেক্ষাগৃহ। আগেই প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছিল করণী সেনা। তাদের সেই হুমকি যে ফাঁকা আওয়াজ ছিল না তা স্পষ্ট হয়ে যায় গত মঙ্গলবার। মঙ্গলবার রাতে গুজরাটের মেমনগরে ব্যাপক তাণ্ডব চালান করণী সেনার সদস্যরা। হিমালয় মলের সামনে দাঁড়ানো একাধিক গাড়ি ও দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। গাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেন ‘পদ্মাবত’ বিরোধীরা। ব্যাপারটা যে সেখানেই মিটে যায়নি, তা স্পষ্ট হয়ে যায় বুধবার বেলা গড়াতেই। আমেদাবাদের পাশাপাশি অগ্নিগর্ভ আকার ধারণ করে ইন্দোর, ফিরোজনগর, মথুরা, গুরুগ্রাম, মেরঠ সহ উত্তর, মধ্য ও পশ্চিম ভারতের একাধিক শহর। করণী সেনার বিক্ষোভের জেরে ব্যস্ত সময়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে দিল্লি-জয়পুর জাতীয় সড়ক। বিভিন্ন জায়গায় রেল অবরোধ করে ক্ষোভ উগড়ে দিতে থাকেন রাজপুত সংগঠনের সদস্যরা। বিক্ষোভকারীদের সামলাতে তড়িঘড়ি গড়ে তোলা হয় বিশেষ পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শূন্যে গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। মুম্বই থেকে গ্রেফতার করা হয় করণী সেনার ৫০ জন সদস্যকে। বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বন্ধ রাখা হয় সমস্ত পাব ও বার। আপত্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে নির্দেশিকা জারি করে প্রশাসন।

‘পদ্মাবত’ নিয়ে গণ্ডগোলের আঁচ ছড়াতে পারে মহানগরী কলকাতাতেও। সেই সম্ভাবনার সিঁদুরে মেঘ দেখেছে পুলিশ প্রশাসন। কোনওরকম অশান্তি শুরু হলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে রাজ্যের পুলিশ। ‘পদ্মাবত’ নিয়ে কোনওরকম গুণ্ডামি যে বরদাস্ত করা হবে না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে রাজপুত রমণীদের জহরব্রত পালনের হুমকি। বৃহস্পতিবার ‘পদ্মাবত’ মুক্তি পেলে চিতোরগড় সাক্ষী থাকবে আরও এক গণ জহরব্রতের। সেই হুমকি ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। তার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন বহু রাজপুত নারীই। জহরব্রতের জন্য নাম লিখিয়েছেন অনেকেই। তাঁদের আটকাতে ইতিমধ্যেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে চিতোরগড় দুর্গ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুর্গে প্রবেশের যাবতীয় পথ। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার ‘পদ্মাবত’-এর মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় সেদিকেই চেয়ে সকলে।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button