দিনভর সুপ্রিম কোর্টের চক্কর কেটেও মক্কেল পি চিদম্বরমকে আগাম জামিনের বন্দোবস্ত করে দিতে পারেননি তাঁর আইনজীবী কপিল সিব্বল। এদিকে সুপ্রিম কোর্ট বিকেলে জানিয়ে দেয় এই জামিনের আবেদনের শুনানি হবে আগামী শুক্রবার। ফলে রাস্তা খোলা ছিল গ্রেফতারির। এদিকে সেই আতঙ্কেই হয়তো গা ঢাকা দিয়েছিলেন চিদম্বরম। সিবিআই তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল। আর ঠিক তখনই গত বুধবার রাতে আচমকাই সিবিআই আধিকারিকরা দেখেন চিদম্বরম টিভিতে। কংগ্রেসের তাবড় নেতৃত্বকে পাশে বসিয়ে কংগ্রেস সদর দফতরেই তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন। যেখানে চিদম্বরম এক কথায় নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন। তবে সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেননি।
চিদম্বরম কংগ্রেস সদর দফতরে। এ দৃশ্য দেখার পর সময় নষ্ট না করে সিবিআই ছোটে কংগ্রেস দফতরে। কিন্তু যুব কংগ্রেস কর্মীদের প্রবল বাধার মুখে পড়ে। এরমধ্যে নিজের দিল্লির বাড়িতে ফিরে যান চিদম্বরম। এটা পরিস্কার ছিল যে তিনি আর পালিয়ে বেড়াতে চাইছেন না। নাহলে তিনি নিজের বাড়ি না ফিরে কোনও অজ্ঞাত স্থানে চলে যেতে পারতেন। কংগ্রেস সদর দফতরে চিদম্বরমের নাগাল না পেয়ে সিবিআই তাঁর বাড়িতে হাজির হয়। সিবিআই আধিকারিকরা সেখানে পৌঁছে দেখেন বাড়ির দরজা বন্ধ। অগত্যা পাঁচিল টপকেই বাড়িতে ঢোকেন সিবিআই আধিকারিকরা। পরে চিদম্বরমকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন গাড়িতে। গ্রেফতার করা হয় চিদম্বরমকে। সেখান থেকে দ্রুত তাঁকে সিবিআই দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
সিবিআইয়ের অধিকর্তা সহ তাবড় আধিকারিকরা সেখানে উপস্থিত হন। রাতেই চিদম্বরমকে জেরা শুরু করে সিবিআই। তবে সিবিআই সূত্র সংবাদ সংস্থাকে জানাচ্ছে চিদম্বরম বিশেষ উত্তর দেননি। তদন্তে সহযোগিতাও করেননি। রাতে গারদে থাকতে চাননি। ছিলেন সিবিআই আধিকারিকের ঘরে। রাত ঘুমলেও বারবার উঠেছেন। সকাল থেকে ফের জেরা শুরু করে সিবিআই। এদিকে চিদম্বরমকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ রাজাবাজারে যুব কংগ্রেসের তরফে প্রতিবাদ দেখানো হয়। কিছুক্ষণের জন্য বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে যুব কংগ্রেস কর্মীরা মিছিল করে এগিয়ে যান।
আইএনএক্স মিডিয়ায় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল সিবিআই ও ইডি। সেই মামলাতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বুধবার। এটা পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি বলেই দাবি করেছেন সলিসিটর জেনারেল। এই মামলাতেই চিদম্বরমের ছেলে কার্তি চিদম্বরমকে আগেই গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। তিনি এখন জামিনে মুক্ত। বৃহস্পতিবার কার্তি দাবি করেন তাঁর সঙ্গে আইএনএক্স মিডিয়ার অন্যতম প্রধান ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের কখনও দেখাই হয়নি। তাঁর বাবাকেও রাজনৈতিক অভিসন্ধি থেকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন কার্তি। এদিকে কংগ্রেস নেতৃত্ব কিন্তু পরিস্কার করে দিয়েছে যেভাবে চিদম্বরমকে গ্রেফতার করা হল তা তাঁরা মানছেন না। তাঁরা সকলে যে চিদম্বরমের পাশে তাও বুঝিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা