উত্তর কলকাতার অন্যতম সেরা পুজোর মধ্যে কাশী বোস লেনের দুর্গাপুজো অবশ্যই একটি। বিধান সরণির ওপর ক্ষুদিরাম কলেজের উল্টোদিকের রাস্তায় ঢুকেই মধ্যবিত্ত পাড়ায় একটি ছোট মাঠ। এই মাঠেই কাশী বোস লেনের মণ্ডপে প্রতি বছর ভিড়ের চাপ সামলাতে হিমসিম খান উদ্যোক্তারা। এ পুজোর ইতিহাস কিন্তু বেশ চমকে দেওয়ার মত। ১৯৩৭ সালে এই পুজোর শুরু। পুজো শুরু হয় স্বাধীনতা সংগ্রামী একদল যুবকের চেষ্টায়। তবে শুরুটা গল্পের মত।
সিমলা ব্যায়াম সমিতি ছিল সে সময়ে বিপ্লবীদের শরীরচর্চার আখড়া। সেখানে পুজোও হত। ইংরেজরা সেসময়ে সিমলা ব্যায়াম সমিতির দুর্গাপুজো বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। ফলে পুজো বন্ধ। সেই সময়ে সিমলা ব্যায়াম সমিতির বিপ্লবী যুবকরা উত্তর কলকাতার শিকদার বাগান নিবাসী কিছু যুবকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে কাশী বোস লেনে নতুন করে দুর্গাপুজো শুরু করেন। সেই থেকে শুরু হয় কাশী বোস লেনের পুজো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডামাডোলের বাজারে ২ বছর এই পুজো বন্ধ হয়ে যায়। তবে ওই ২ বছরই। তারপর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এ পুজো হয়ে আসছে।
শেষ দেড় দশকে কাশী বোস লেনের পুজো নতুন নতুন চমক দিয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছে। এবারও নতুন ভাবনায় সাজছে তাদের মণ্ডপ। এ বছর তাদের থিম ‘সঙ্গীত’। বিভিন্ন ধরণের বাদ্যযন্ত্র দিয়ে মণ্ডপ সেজে উঠছে। বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি থাকছে তুলো ধোনার যন্ত্রও। তুলো ধোনার যন্ত্রেরও একটা নিজস্ব সুর আছে। তাই একেও একটি বাদ্যের জায়গা দিতে চেয়েছেন শিল্পী। শিল্পী প্রদীপ দাসের এই থিমের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে সাজছে প্রতিমা ও থিম সং। যা পুরো ভাবনাকে আরও জীবন্ত করে তুলবে।
থাকছে এলইডি আলোর বিশেষ আলোকসজ্জা। যা রাতের অন্ধকারে এক ভিন্ন আবহ উপহার দেবে দর্শকদের। প্রতিমা এখানে থিমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নৃত্যরতা। নৃত্যের ভঙ্গিতে দেবীকে দেখতে পাবেন দর্শকরা। প্রতিমাশিল্পী মিন্টু শিকদার। থিম সং তৈরি করছে কবিতা কানেকশন। মণ্ডপ, প্রতিমা, আবহ সঙ্গীত ও এলইডি আলোর সংমিশ্রণে এক সার্বিক মোহময়তা তৈরি করাই উদ্যোক্তাদের প্রধান লক্ষ্য। যা দর্শকদের কিছুক্ষণের জন্য অন্য এক আবেশে আবিষ্ট করবে।
কাশী বোস লেনের এবারের পুজোর বাজেট আনুমানিক ৩২ লক্ষ টাকা। পুজোর উদ্বোধন চতুর্থীর দিন। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের সমাগম নিয়ে প্রায় নিশ্চিত উদ্যোক্তারা। ভিড় সামলানোটাই তাঁদের কাছে প্রতি বছরের মত এবছরও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।