কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের লেখা অন্নদামঙ্গল কাব্যের কথা সকলের জানা। সেই মঙ্গলকাব্যে ঈশ্বরী পাটনীর কাহিনি স্কুল পাঠ্যেও জায়গা পেয়েছে। অন্নদামঙ্গল লেখা হয়েছিল দেবী অন্নপূর্ণাকে সামনে রেখে। পার্বতীরই আর এক রূপ অন্নপূর্ণা। সেই অন্নপূর্ণাই দমদম পার্ক তরুণ দল-এর মণ্ডপে দেবী দুর্গা।
নদীর ধারে এসে এক সাধারণ নারী বেশে দাঁড়ালেন দেবী দুর্গা। ঈশ্বরী পাটনীকে খেয়া পার করিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেন। মাঝি তাঁকে নদী পার করিয়ে দিলে দুর্গা তখন তাঁর নিজের পরিচয় দিলেন। ঈশ্বরী পাটনীকে বর দিতে চাইলেন। তখন ঈশ্বরী পাটনী বললেন, তাঁর নিজের জন্য কিছু চাইনা। কিন্তু তাঁর সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। পিতার সন্তান স্নেহের, সন্তানের সুখের সেই আর্জিই এবার দমদম পার্ক তরুণ দল-এর থিম, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’।
অন্নদামঙ্গলের সেই সুপরিচিত কাহিনি এবার জায়গা পাচ্ছে দমদম পার্ক তরুণ দলের মণ্ডপে। সঙ্গে থাকছে মাঝিদের জীবন-জীবিকা। মণ্ডপে ঢুকতে সামনেই পড়বে একটি অতিকায় বিলাসবহুল নৌকা। আশপাশে থাকবে আরও কয়েকটি তুলনার ছোট নৌকা। মণ্ডপের ভিতরে প্রবেশ করলে চোখ কাড়বে মাছ ধরার জাল। থাকবে মাটির কলসির সাজ। নাইলনের দড়ির কারুকার্য। এককথায় মাঝিদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সব জিনিসই এবার মণ্ডপ জুড়ে এক অন্য আবহের জন্ম দেবে। আর এই পুরো কর্মকাণ্ডকে রূপ দিচ্ছেন থিম শিল্পী অনির্বাণ দাস।
অপেক্ষাকৃত নতুন জনবসতি দমদম পার্কের এই পুজো খুব পুরনো নয়। এবার এই পুজো পা দিল ৪০ বছরে। গত ১০ বছর ধরে থিম পুজো করে আসছেন উদ্যোক্তারা।
এবারের থিমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই দুর্গা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। অতিকায় হচ্ছে দেবীমূর্তি। ১৭ ফুট উচ্চতার প্রতিমা এখানকার পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হতে চলেছে সন্দেহ নেই। প্রতিমাশিল্পী সৌমেন পাল। রয়েছে থিম সং-ও। সুর বাঁধছেন শতদল চট্টোপাধ্যায়। গোটা প্যান্ডেল জুড়ে থাকবে আলোর কেরামতি। যা গোটা বিষয়বস্তুকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলবে।
এবার দমদম পার্ক তরুণ দলের পুজোর বাজেট আনুমানিক ৪০ লক্ষ টাকা। উদ্বোধন তৃতীয়ার দিন। পুজোর দিনগুলোয় প্রাত্যহিক লক্ষাধিক মানুষের ভিড় আশা করছেন উদ্যোক্তারা।