ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাংলায় স্বাধীনতা সংগ্রামের আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। সেই অগ্নিযুগে বিপ্লবীদের আখড়া ছিল বিবেকানন্দ রোড সংলগ্ন সিমলা ব্যায়াম সমিতি। ব্যায়াম সমিতি নামটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে এটা ছিল শরীরচর্চার আখড়া। ছিলও তাই। লাঠি খেলা, ছুরি খেলা থেকে শুরু করে শরীর গঠনের যোগ-ব্যায়াম সবই হত এখানে। ফলে সেসময়ে যুবকদের যাতায়াত লেগেই থাকত। এঁরাই ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী।
১৯২৬ সালে বিপ্লবী অতীন্দ্রনাথ বসুর নেতৃত্বে সিমলা ব্যায়াম সমিতির মাঠে শুরু হয় দুর্গাপুজো। কাছেই ছিল স্বামীজির বাড়ি। সিমলা পাড়ায়। স্বামীজির ভাই মহেন্দ্রলাল দত্ত-ও এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যদিও বরাবর বিপ্লবীদের আখড়া বলে সিমলা ব্যায়াম সমিতির ওপর নজর ছিল ইংরেজ শাসকদের। ১৯৩২ সালে ব্রিটিশরা এই ক্লাবকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে পুজোও বন্ধ হয়ে যায়। এই নিষেধাজ্ঞা ছিল ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত। ১৯৩৪ সালে ক্লাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সিমলা ব্যায়াম সমিতির পুজোর সভাপতি হন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
সিমলা ব্যায়াম সমিতির পুজো সেই অর্থে অনেকটাই ঐতিহ্যের ভারে সমৃদ্ধ। বহু স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। এই পুজোয় প্রতিমা চিরকালই দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। বড় বড় টানা চোখে, সাবেকি সাজে ঝলমল করে দুর্গার রূপ। তার তেজ। এটাই ছিল সিমলা ব্যায়াম সমিতির পুজোর মৌলিক দিক। এ পুজোয় মানুষ প্যান্ডেল দেখতে হাজির হন না। হন প্রতিমা দর্শনে। মাতৃমূর্তির দিকে চেয়ে প্রাণ জুড়িয়ে যায় সকলের। সেই ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছেন এখানকার পুজোর উদ্যোক্তারা। এবার প্রতিমাশিল্পী গৌতম সেন।
এখনও এই পুজোয় থিমের ছোঁয়া লাগেনি। এবার মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে মহীশূরের রাজপ্রাসাদের আদলে। বিশাল মাঠ হওয়ায় মণ্ডপ অনেকটা ছড়িয়ে করার সুবিধা পান উদ্যোক্তারা। এছাড়া মাঠের একাংশে প্রতি বছরই মেলা বসে। নাগরদোলা থেকে শুরু করে নানা রকম রাইড যেমন কচিকাঁচাদের মনোরঞ্জন করে, তেমনই থাকে নানা ধরণের খাবারের স্টল। চেয়ারে পিঠ লাগিয়ে রসনা তৃপ্তির সঙ্গে সঙ্গে টানা ঠাকুর দেখা ক্লান্ত শরীরটাকে আরও একটু চাঙ্গা করে নেওয়ার সুবিধা পান দর্শনার্থীরা।
সিমলা ব্যায়াম সমিতির এবারের পুজোর বাজেট আনুমানিক ২৫ লক্ষ টাকা। উদ্বোধন হবে তৃতীয়ার দিন। পুজোর দিনগুলোয় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা।