এ পুজোয় থিমের ঘনঘটা নেই। নেই চমক। বাঁধাধরা ধরণ মেনে পুজো। তবু কলকাতার পুজোগুলোর মধ্যে বাগবাজার সার্বজনীনের বনেদিয়ানা অন্যদের থেকে কোথাও যেন আলাদা! ১৯১৯ সালে এই পুজোর সূত্রপাত। তখন শুরু হয়েছিল স্থানীয় নেবুবাগান লেন ও বাগবাজার স্ট্রিটের মোড়ে ৫৫ নম্বর বাগবাজার স্ট্রিটে। নাম ছিল ‘নেবুবাগান বারোয়ারি দুর্গা পুজো’। এখানেই কয়েক বছর পুজো হয়। ১৯২৪ সালে পুজোটি সরে যায় বাগবাজার স্ট্রিট ও পশুপতি বোস লেনের মোড়ে। পরের বছর ফের সরে যায় কাঁটাপুকুরে। ১৯২৭ সালে ফের সরে পুজো। সেবার হয় বাগবাজার কালীমন্দিরে। ১৯৩০ সালে বিখ্যাত আইনজীবী দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেষ্টায় পুজোটি নতুন চেহারা পায়। নাম হয় ‘বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গোৎসব ও প্রদর্শনী’। ১৯৩৬ সালে এই পুজোর সভাপতি হয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বহু প্রথিতযশা ব্যক্তি বাগবাজারের পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। যাঁদের মধ্যে ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার হরিশঙ্কর পাল প্রমুখ।
বাগবাজার সার্বজনীনের মাতৃপ্রতিমা নজরকাড়া। একচালার ঠাকুর। মায়ের গায়ের রং অতসী। অসুর সবুজ। একচালার ঠাকুরে পুরো সাজটাই ডাকের। বরাবর এই একই প্রতিমা গড়ে আসছে এই বারোয়ারি। কখনও অন্য কিছু করার চেষ্টা করেনি। তবু ফি-বছর সেই একই প্রতিমা দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান বাগবাজারের মণ্ডপে। এটাই এদের বড় পাওনা।
প্যান্ডেল নিয়ে কোনওকালেই তেমন কোনও আলোড়ন ফেলার চেষ্টা করেননি বাগবাজারের উদ্যোক্তারা। এবারও সাধারণ বাঁশ, কাপড়, ব্যাটম, ত্রিপলের প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের প্রবেশপথটি তৈরি হচ্ছে স্বর্ণমন্দিরের একটি প্রবেশপথের আদলে।
বাগবাজারের পুজোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এখানকার সিঁদুর খেলা। বিজয়ার দিন সকাল থেকেই লাইন পড়ে এখানে। দূরদূরান্ত থেকে মহিলারা আসেন এখানে মাকে সিঁদুর দিতে। নিজেদের মধ্যে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠতে। সেই রাঙানো সকালের দিকে চেয়ে থাকেন অনেকেই। যারা সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেন না, তাঁরাও টিভির পর্দায় চোখ রেখে মুহুর্তগুলোকে উপভোগ করেন।
বাগবাজারের পুজোর আর একটি পাওনা এখানকার মেলা। পুজোকে কেন্দ্র করে মাঠেই বসে মেলা। প্যান্ডেল থেকে ঠাকুর দর্শনের পর বেরিয়ে অনেকেই রসনা বিলাসে মন দেন। কেউবা জিনিসপত্র কেনায়। বাচ্চাদের জন্য খেলনা, বেলুন থেকে নানা রকমারি জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। পুজোর আবহে মেলার আনন্দ। এই ডবল পাওনাটাই বা কম কি?
এবার বাগবাজারের পুজোর উদ্বোধন পঞ্চমীর দিন। পুজোর বাজেট আনুমানিক ৪০ লক্ষ টাকা। প্রাত্যহিক লক্ষাধিক মানুষের সমাগম আশা করছেন উদ্যোক্তারা।