লকডাউনে বাঙালির মননেই পালিত হল রবীন্দ্রজয়ন্তী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে স্মরণ করতে দিন লাগে না। তাই তাঁর জন্মজয়ন্তী এই লকডাউনে অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালিত না হলেও তাঁকে স্মরণে খামতি রইল না। বাঙালির মননে শুক্রবার সকাল থেকেই জড়িয়ে রইলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২৫শে বৈশাখের সকাল মানেই বাঙালি জীবনে এক অন্য ছোঁয়া। ঘুম ভাঙা চোখে সকালের প্রথম রবিকিরণটা এসে আছড়ে পড়লেই কোন সে মহাশূন্য থেকে ভেসে আসে এক অমোঘ সুর। সে সুর বাঙালির একান্ত আপনার। সে শব্দ অমৃত সমান। আপামর বাঙালির ভাবনার সবটুকু, আবেশের রেশটুকু আর অনুভূতির স্পর্শটুকু যেন এক মায়াবী মন্ত্রে মানুষের মনের কোণা থেকে চুরি করে নিয়ে গেছেন ঈশ্বরের এক বরপুত্র।
ক্ষুরধার লেখনীকে কলমের খোঁচা বলে জানি। কিন্তু হা ঈশ্বর এ কোন নক্ষত্র যে মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত অব্যক্ত মুহুর্তগুলোকে নিজ মনে ধারণ করে তা লেখনী দিয়ে অবলীলায় ফাঁস করে দেন। সে কলমের শক্তি কী কোনও মাপকাঠিতে ওজন করা সম্ভব! অবাক হয়ে মানুষ ভাবে এ কথা তুমি কেমন করে জানলে হে গুণী! তোমায় কে বলে দিল আমার স্বপ্নের কথা? আমার ভালোলাগা। আমার কান্না। সকলের অলক্ষ্যে যে ভালবাসা চিরদিন কোনও এক নারীর অন্তরের গভীরে গোপনেই রয়ে গেল, মুখে এল না, তা তোমার কলম কেমন করে জানল বলতে পারো?
আজি হতে শতবর্ষ পরেও বাঙালির অন্যতম গর্বের মানুষটা কোথাও যেন অক্লেশে বলে দিয়ে যাবেন শতবর্ষ পরেও তিনি আছেন। তিনি থাকবেন। যতদিন মানবসভ্যতা বিশ্বজুড়ে বিরাজ করবে, ততদিন বাঙালি মননের শিকড়টা আঁকড়ে ধরে থাকবেন তিনি। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ঋদ্ধ করে, অবাক করে হে মহাজীবন তোমার এ নিঃশব্দ অঙ্গিকার চিরদিন ঋণ হয়ে থাকবে। যার সুদ বাড়ে ঠিকই, কিন্তু কোনওদিন শোধ হয়না।
সেই বাঙালির আপনার রবি ঠাকুরের ১৫৯ তম জন্মবার্ষিকীতে এদিন সকাল থেকেই বাঙালির মনের সবটুকু ঘিরে রইলেন বিশ্বকবি। লকডাউনে উৎসব নেই। অনুষ্ঠান নেই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আর বাঙালির সম্পর্ক এতটাই নিবিড় যে সে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে উৎসব, অনুষ্ঠান লাগে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকেন বাঙালির হৃদয়ে, বাঙালির মনে। এদিন পুরনো ছবি নজর কাড়েনি ঠিকই। নম নম করে পালিত হয়েছে বাঙালির একান্ত আপনার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী। নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নয়, করোনা উদ্বেগ ও লকডাউনের মাঝে মননেই রবিস্মরণ করল বাঙালি। কারণ এমন করোনার দুঃসহ উদ্বেগেও রবীন্দ্রনাথকেই ভরসা করতে হচ্ছে সকলকে। তাঁর লেখাকে। যেখানে বিশ্বকবি যেন এই সময়ের কল্পনা করেই লিখে যান, বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা – বিপদে আমি না যেন করি ভয়।