২২ নভেম্বর ২০১৪-এ সাহারা গোষ্ঠীতে যখন আয়কর হানা হয় তখন আয়কর আধিকারিকরা সেখানে একটি ডায়েরি হাতে পান। সেই ডায়েরিতে লেখা ছিল সংস্থার তরফে কাকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই ডায়েরির তথ্য আয়কর দফতরের হাতে রয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৪-র মধ্যে মাত্র ৫ মাসে নরেন্দ্র মোদীকে ৯ বার টাকা দিয়েছে সাহারা। কবে কত টাকা দেওয়া হয়েছে তাও ওই ডায়েরিতেই রয়েছে। আয়কর দফতরের হাতে থাকা ওই তালিকা অনুযায়ী, গত ৩০ অক্টোবর ২০১৩-তে ২.৫ কোটি টাকা, ১২ নভেম্বর ২০১৩-তে ৫ কোটি টাকা, ২৭ নভেম্বর ২০১৩-তে ২.৫ কোটি টাকা, ২৯ নভেম্বর ২০১৩-তে ৫ কোটি টাকা, ৬ ডিসেম্বর ২০১৩-তে ৫ কোটি টাকা, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩-তে ৫ কোটি টাকা, ১৩ জানুয়ারি ২০১৪-তে ৫ কোটি টাকা, ২৮ জানুয়ারি ২০১৩-তে ৫ কোটি টাকা এবং ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪-তে ৫ কোটি টাকা নরেন্দ্র মোদীকে দিয়েছে সংস্থা। বিড়লাদের থেকেও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ১২ কোটি টাকা নেন নরেন্দ্র মোদী। যা আয়কর দফতরের আধিকারিকদের সই করা কাগজে নথিবদ্ধ রয়েছে। আর চাইলে সেই তথ্য তিনি সকলের সামনে তুলেও ধরতে পারেন। নরেন্দ্র মোদীর খাসতালুক গুজরাটে দাঁড়িয়ে এদিন এমনই এক ব্রহ্মাস্ত্র দাগলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত দুর্নীতির নথি তাঁর হাতে আছে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীনই খোলাখুলি এমন দাবি করেছিলেন রাহুল। বিস্তারিতভাবে বলতে চেয়েছিলেন সংসদে। দাবি করেছিলেন তিনি মুখ খুললে ভূমিকম্প হবে। কিন্তু হট্টগোলের সংসদে সে সুযোগ পাননি। পরে আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল খোঁচাও দেন তাঁকে। সত্যিই যদি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন কোনও তথ্য তাঁর হাতে থেকে থাকে তা সংসদের বাইরেই বলুন না রাহুল!
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের এমন খোঁচার পরও আস্তিনের তাস সযত্নেই লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। এদিন গুজরাটের মেহসানায় লক্ষাধিক মানুষের জনসভায় অবশেষে সেই ব্রহ্মাস্ত্রটিই ছেড়ে দিলেন রাহুল গান্ধী। অন্তত রাজনৈতিক মহলের এমনই দাবি। এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তেরও দাবি জানান রাহুল। ক্রমশ বিরোধী রাজনীতির মুখ হয়ে ওঠা রাহুল গান্ধীর এদিনের বক্তব্যের এটাই ছিল মূল চমক। বাদবাকি পরতে পরতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে উঠে এসেছে ধনী তোষণের অভিযোগ। দেশের হাতে গোনা ধনীর লক্ষ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ মকুব করতেই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত বলে এদিন দাবি করেন রাহুল। তাঁর ব্যাখ্যা, এত টাকা মকুব করতে গেলে ব্যাঙ্কের ঘরে টাকা ঢোকানো জরুরি ছিল। তাই নোট বাতিল করে দেশের ৯৯ শতাংশ সৎ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ জোর করে ব্যাঙ্কে ঢুকিয়ে নিলেন মোদী। দেশের মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে দেশের ৬০ শতাংশ সম্পদ রয়েছে। বাদবাকি রয়েছে ৯৯ শতাংশের হাতে। কিন্তু এই ১ শতাংশের গায়ে আঁচড়টি না লাগিয়ে কেবল দেশের আমজনতাকে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলে দাবি করেন রাহুল। দেশের মোট কালো টাকার মাত্র ৬ শতাংশ নগদে রয়েছে। বাকি রয়েছে, বিদেশের ব্যাঙ্কে, রিয়েল এস্টেটে, সোনায়। এটা মোদী সরকারের ব্যাখ্যা। অথচ ওই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা না করে প্রধানমন্ত্রী কেবল ৬ শতাংশ উদ্ধারে গোটা দেশের আমজনতার ওপর ফায়ার বোম্বিং চালিয়েছেন বলে দাবি করেন রাহুল গান্ধী। এদিন জনসভায় রাহুলের দাবি, অল ক্যাশ ইজ নট ব্ল্যাক, অল ব্ল্যাক মানি ইজ নট ইন ক্যাশ! অর্থাৎ সব টাকা কালো নয়, আর সব কালো টাকা ক্যাশে নেই! মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত দুর্নীতি নয়, দেশের আমজনতার বিরুদ্ধে বলেও এদিন তোপ দাগেন রাহুল।