মোঘল বাদশাকে রাখি পাঠালেন রাজপুত রানি, হারিয়ে যাওয়া এক ইতিহাস
রাজপুতদের প্রথানুসারে রানি একটি রাখি পাঠালেন বাদশা হুমায়ুনের কাছে সাহায্য চেয়ে। সেসময় রাখি পাওয়াটা ছিল একটা বিশেষ সামাজিক সম্মানের ব্যাপার।
১৫৩৪ সালের কথা, আবার কালো মেঘে ভরে উঠল মেবারের আকাশ। দ্বিতীয়বার আক্রান্ত ও লুণ্ঠিত হল চিতোর। আক্রমণ করলেন গুজরাটের বাহাদুর শাহ। এই সময় মেবারের ইতিহাসে ঘটে গেল এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। ঘটনাটি এই রকম –
মহারানা সংগ্রাম সিংহের স্ত্রী ছিলেন রানি কর্ণবতী, উদয় সিংহের মা। ১৫৩৪ সালে সুলতান বাহাদুর শাহ চিতোর আক্রমণের সময় উদয় সিংহ ছিলেন একেবারেই শিশু। রাজপুত বীরদের সঙ্গে নিয়ে রানি কর্ণবতী প্রবলভাবে বাধা দিলেন সুলতানকে। কিন্তু সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হল।
এসময় অনন্যোপায় হয়ে রাজপুতদের প্রথানুসারে রানি একটি রাখি পাঠালেন দিল্লির বাদশা হুমায়ুনের কাছে সাহায্য চেয়ে। রাখি পাঠানোর প্রথায় একটি মধুর ধর্মীয় সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যিনি পাঠান এবং যার কাছে পাঠান তার সঙ্গে, এটাই প্রচলিত নিয়ম। সেই সময় রাখি পাওয়াটা ছিল একটা বিশেষ সামাজিক সম্মানের ব্যাপার।
মোঘল বাদশা রাখি পেলেন এমন সময়, যখন তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন বাংলার বিদ্রোহ দমনে। তবুও দ্রুততার সঙ্গে যাত্রা করলেন চিতোর অভিমুখে। দূরত্ব বড় কম নয়। সুতরাং আসতে দেরি হল পথে।
যখন হুমায়ুন চিতোরে এসে পৌঁছলেন তখন সব শেষ হয়ে গিয়েছে। শত শত রাজপুত বীর তখন রণক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করেছেন। আর নিশ্চিত পরাজয়ের গ্লানি থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে রাজপুত রমণীদের সঙ্গে নিয়ে রানি কর্ণবতী প্রাণ দিয়েছেন জহরব্রতে। এই হল মধুর ও প্রীতির ধর্মীয় সম্পর্কের অন্তর্নিহিত ছোট্ট একটি মর্মান্তিক দুঃসংবাদের কথা, রাখিবন্ধনে।