ভারতীয় আইনজীবী হিসাবে যদি কেউ সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়ে থাকেন তবে তিনি রাম জেঠমালানি। দুঁদে আইনজীবী শব্দটা তাঁর নামের সঙ্গে সবচেয়ে ভাল খাপ খায়। দিল্লিতে তাঁর নিজ বাসভবনে মৃত্যু হল এই ৯৬ বছর বয়স্ক বর্ণময় ব্যক্তিত্বের। যিনি শুধু আইনজীবী হিসাবেই নন, এক সময়ের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, একজন ইন্দিরা সমালোচক, পরবর্তীকালে একজন বিজেপি সমালোচক। আবার বিজেপির হাত ধরেই লোকসভা নির্বাচনে লড়ে জেতেন তিনি। আবার তিনিই বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে লখনউ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নির্দল হিসাবে। যদিও সেই নির্বাচন তিনি হেরে যান।
রাম জেঠমালানির জন্ম অধুনা পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের শিখরপুরে। ১৯২৩ সালে জন্মগ্রহণ করা রাম জেঠমালানি ছিলেন ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। স্কুলে ডবল প্রমোশন পেয়ে ক্লাসে উঠতেন। ফলে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে ফেলেন তিনি। তারপর আইন নিয়ে পড়াশোনা করে মাত্র ১৭ বছর বয়সে আইনের স্নাতক হন। ১৮ বছর বয়স থেকে শুরু করেন প্র্যাকটিস। প্রথম জীবনে আইনজীবী হিসাবে নিজের সবটুকু উজাড় করে মামলা লড়া শুরু করেন। তারপর একে একে আসতে শুরু করে সাফল্য। বড় বড় মামলায় ডাক পড়তে থাকে তাঁর।
কমান্ডার নানাবতী বনাম মহারাষ্ট্র সরকার মামলায় জিতে তাঁর নাম সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের অন্যতম সেরা ফৌজদারি আইনজীবী হিসাবে রাম জেঠমালানি পরিচিতি পেয়ে যান। এছাড়া হর্ষদ মেহতার হয়ে তিনি মামলা লড়েন, রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীর তরফ থেকেও তিনি তার পক্ষে আইনজীবী হিসাবে লড়েন, কেতন পারেখ দুর্নীতি মামলায় কেতন পারেখের হয়ে লড়েন, আফজল গুরুর জন্যও তিনি আদালতে সওয়াল করেন।
আইনজীবী হিসাবেই নয়, তিনি পরিচিতি পান রাজনৈতিক জীবনেও। জন সংঘের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজনীতি শুরু। তারপর বিজেপির টিকিটে ২ বার লোকসভা নির্বাচনে জয় পান। ইন্দিরা গান্ধীর প্রবল সমালোচক হিসাবে তাঁকে সারা ভারত চিনত। বিশেষত ইন্দিরা গান্ধীর জারি করা জরুরি অবস্থা নিয়েও কড়া সমালোচনা করে প্রায় গ্রেফতারির মুখে পড়েন জেঠমালানি। সে সময় পালিয়ে যান কানাডায়। কিন্তু ইন্দিরা সমালোচনা থেকে সরে আসেননি। বাজপেয়ী মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন আইনমন্ত্রী আবার নগরোন্নয়নমন্ত্রী। সেই বাজপেয়ীর বিরুদ্ধেই আবার ভোটে দাঁড়ান তিনি। ২০১২-তে বিজেপির কড়া সমালোচনা করে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। তবে তার পরেও রাম জেঠমালানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা