জগন্নাথ কেন লাফিয়ে লাফিয়ে রথে চড়েন, রয়েছে অজানা এক মাহাত্ম্য
ভারতের বৃহত্তম উৎসবগুলির মধ্যে রথযাত্রা অন্যতম। আষাঢ় মাসের পুষ্যানক্ষত্র যুক্ত দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় রথযাত্রা, চলে দশমী তিথি পর্যন্ত।
ভারতের বৃহত্তম উৎসবগুলির মধ্যে শ্রীপুরুষোত্তম ধামের রথযাত্রা উৎসব অন্যতম। প্রতিবছর আষাঢ় মাসের পুষ্যানক্ষত্র যুক্ত দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় রথযাত্রা, চলে দশমী তিথি পর্যন্ত।
জগন্নাথদেবের রথের নাম নন্দীঘোষ। বলরামের নীলবর্ণের রথের শীর্ষভাগে তালচিহ্নের কারণে রথের নাম হয়েছে তালধ্বজ। সুভদ্রার রথ পদ্মধ্বজ, দেবীদলন বা দেবীরথ নামেই রথের পরিচিত।
প্রথমে নবনির্মিত তিনটি রথকে আনা হয় জগন্নাথ মন্দিরের সিংহদ্বারে। জগন্নাথ রথে আসেন মধ্যাহ্নে। তিনটি বিগ্রহ রথে তোলার দৃশ্যটি নয়নাভিরাম। প্রথমে বলরামকে দড়ি দিয়ে বেঁধে তোলা হয় রথে। কোলে করে নিয়ে রথে বসানো হয় সুদর্শন ও সুভদ্রাকে। সব শেষে রথে তোলা হয় জগন্নাথদেবকে।
জগন্নাথদেবকে রথে তোলার ব্যাপারটি ভারী সুন্দর। বিগ্রহের কোমরে রেশমি দড়ি বেঁধে দোলা দিতে দিতে আনা হয় মন্দিরের বাইরে।
একবার দোলা দিয়ে সামনের দিকে পাতা উঁচু কাঠের আসনে বসানো হয় তুলোর গদিতে। আবার ওই আসন সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সামনে। আবার আগের মতোই দোলা দিয়ে বিগ্রহকে স্থাপন করা হয় এই ভাবে। দৃশ্যটা দেখলে মনে হয় যেন জগন্নাথদেব চলছেন লাফিয়ে লাফিয়ে।
রথযাত্রার সময় প্রভু জগন্নাথদেবের সিংহাসন থেকে অবতরণ উৎসবকে পাণ্ডুবিজয় বা পহাণ্ডিবিজয় বলে। উৎসবটি রথ থেকে অবতরণকালেও হয়। ‘পহাণ্ডি’ শব্দ (ওড়িয়া) সংস্কৃত ‘পাদহুণ্ডন’ থেকে এসেছে।
পাদহুণ্ডন কথাটির অর্থ ধীরে ধীরে পদবিন্যাস। সুতরাং পহাণ্ডিবিজয় ধীরে ধীরে পদক্ষেপপূর্বক গমন অর্থে ব্যবহৃত হয়। নামানোর সময় ধাপে ধাপে নামানো হয়। তখন প্রত্যেক ধাপে থাকে একটি তুলোর গদি, তার উপরেই অবতরণ করা হয় দারুময় প্রভু জগন্নাথদেবকে।
সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয় বিশ্বাবসু বংশীয় (স্থানীয় আদিম অধিবাসীবৃন্দ) শবরদের মাধ্যমে। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে রথে তোলা নামানোর কাজে যারা নিযুক্ত থাকেন, তাদের ‘দয়িতা’ বলে। এ সময় দয়িতারাই সব।
স্নানযাত্রা থেকে গুণ্ডিচাযাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি অনুষ্ঠানই থাকে দয়িতাদের অধিকারে। পুজোর কাজগুলি যারা করেন তাদের বলে পতি, এরা বিদ্যাপতি বংশীয়।