আজ রথযাত্রা। রথ উপলক্ষে পুরীতে এদিন সকাল থেকেই সাজসাজ রব। লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড়। সকাল থেকেই রীতি মেনে শুরু হয়েছিল তোড়জোড়। প্রথা মেনেই পুরীর রাজা সোনার ঝাঁটা দিয়ে রাস্তা পরিস্কার করার পর পড়ে রশিতে টান। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার ৩ রথ এগোয় মাসির বাড়ির দিকে। গুণ্ডিচা বাড়ির এই পথে বেশ কয়েক জায়গায় রথ দাঁড়ায়। সবই মন্দিরের সামনে। জগন্নাথদেবের রথযাত্রা চাক্ষুষ করতে পুণ্যার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে পুরীর রাজপথে। পুরীর পাশাপাশি এদিন পশ্চিমবঙ্গ জুড়েও রথযাত্রা পালিত হচ্ছে সাড়ম্বরে। শ্রীরামপুরের মাহেশের রথ এ রাজ্যের সবচেয়ে পুরনো রথযাত্রা। মাহেশের রথ ঘিরে সেখানেও এদিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের ঢল। রথের রশিতে একটিবার টান দেওয়ার জন্য পুণ্যার্থীদের উন্মাদনা প্রতি বছরই নজর কাড়ে।
কলকাতা থেকে জেলা। বিভিন্ন জায়গায় কিন্তু বিভিন্ন পরিবারে রথযাত্রা পালনের রীতি আছে। পরম্পরা মেনে বার হয় রথ। সে রথের যাত্রার নিয়মেও আছে বৈচিত্র্য। এ রাজ্যে এমন অনেক পরিবার আছে যাঁদের রথযাত্রা এলাকার মানুষের কাছেও একটা ঐতিহ্য। শতাব্দী প্রাচীন এসব রথযাত্রা চলে আসছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। কাঁসর, ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি, হরির লুঠ, দ্বারিভোগ, আরও কত যে নিয়ম! কিন্তু এসব রথ ঘিরেও স্থানীয় মানুষের মধ্যে উৎসাহের অন্ত থাকে না।
কলকাতায় এদিন চিরাচরিত প্রথা মেনে বার হয় ইস্কনের রথ। ইস্কনের রথের রশিতে গত কয়েক বছর ধরেই প্রথম টান পড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই ট্র্যাডিশন মেনে এবারও মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই প্রথম টান পড়ল ইস্কনের রথের রশির। এদিন তিনি প্রথমে শ্রীজগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রাকে আরতি করে রথের রশিতে টান দেন। মায়াপুরেও রথযাত্রা উপলক্ষে মহা ধুমধাম। সকাল থেকেই শুরু হয় উৎসব। এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন কোণায় এদিন রথ বার হয়। অনেক পরিবারের প্রাচীন রীতি রথ বার করা। সেই রীতি, পরম্পরা এবারও বজায় রেখেছেন তাদের বংশধরেরা। সেসব রথ নির্দিষ্ট পথ পরিক্রমা করে এদিন। এছাড়া রথযাত্রার দিন মানেই কচিকাঁচাদের আনন্দ। হয় বাড়িতে মুড়ে রাখা রথ ঝেড়েঝুরে বার করা, নয়তো নতুন রথ কেনা। বাহারি পাতা, মালা, ফুল, রংবাহারি কাপড়, থার্মোকল দিয়ে সেজে ওঠে সেসব রথ। কোনওটা একতলা, কোনওটা দোতলা, কোনওটা তিনতলা তো কোনওটা আরও বড়। সেই রথে বসানো হয় মাটি বা ছবির ফ্রেমে বাঁধানো জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে। তারপর পুজো দিয়ে বাতি জ্বালিয়ে, ধূপ দিয়ে সেই রথে টান পড়ে কচি হাতের। কেউ রাস্তায় তো কেউ ছাদে, বিকেল নামতেই রথের রশিতে পড়ে টান। মুখে থাকে ভেঁপু। শৈশবের এই আনন্দ চিরদিন না ভোলা স্মৃতি হয়ে থেকে যায় মানুষের মনে। যা তার পরবর্তী প্রজন্মের হাত ধরে বেঁচে থাকে কালের নিয়মে।