সিঙ্গারা এ দেশের খাবারই নয়, কীভাবে দেশে এল বাঙালির পছন্দের খাবার
পাড়ার মিষ্টির দোকানের সিঙ্গারা, নিমকি বাঙালির আদি অনন্ত বিকেলের জলখাবার। এই সিঙ্গারা কিন্তু এ দেশের খাবারই নয়। এ দেশে আসার কাহিনিটাও বেশ চমকপ্রদ।
হালফিলের ফাস্টফুডের জামানা শুরুরও অনেক আগে বাঙালির জীবনে ফাস্টফুড ছিল। বিকেল নামলে সেসব ফাস্টফুডে মন ভরাতে এতটুকু কৃপণতা করতেন না বঙ্গবাসী। সেসব ফাস্টফুডের তালিকায় প্রথমেই যে নামটা জ্বলজ্বল করত তা হল সিঙ্গারা। সেই সঙ্গে নিমকি, তেলেভাজাও ভালই সঙ্গত দিত।
বাঙালির প্রিয় স্ন্যাক্স সিঙ্গারার কদর কিন্তু এই ফাস্টফুডের জামানতেও অম্লান। সিঙ্গারার আকর্ষণ কোনও অংশে কম হয়নি। কিন্তু যে সিঙ্গারা বা সামোসার কদর দেশজোড়া সেই সিঙ্গারা এদেশিয় খাবারই নয়।
এ দেশে সিঙ্গারা পা রেখেছিল তার জন্মের অনেক পরে। আর যাঁরা নিরামিষ মুখরোচক খাবার হিসাবে সিঙ্গারায় কামড় বসান তাঁদের জেনে রাখা ভাল যে সিঙ্গারা জন্মে থেকে কখনই নিরামিষ খাবার ছিলনা।
সিঙ্গারার জন্মস্থান কিন্তু ভারত থেকে খুব দূরেও নয়। ইরানে জন্ম হয় সিঙ্গারার। সেখানে সেটির নাম ছিল সামসা। দশম শতাব্দীতে এই সামসার জন্ম হয়।
পরিব্রাজক ইবন বতুতা লিখেছেন, এটি আসলে মাংসের কিমা, পেস্তা, কাঠবাদাম, পেঁয়াজ এবং কিছু মশলা মিশিয়ে তৈরি এমন এক খাবার যা এই মিশ্রণকে আটার পাতলা চাদরে মুড়ে ঘি দিয়ে ভেজে তৈরি হত। ফলে এটা পরিস্কার যে চেনা সিঙ্গারা জন্ম থেকেই নিরামিষ খাবার ছিলনা।
ভারতে যখন সুলতানি আমল চলছে তখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে এই খাবারকে ভারতে এনেছিলেন পারস্যের রাঁধুনিরা। তাঁরা সুলতানি আমলে সম্রাটদের রসনা তৃপ্তির আশায় এই খাবারকে ভারতে নিয়ে আসেন।
তারপর সময়ের সঙ্গে সিঙ্গারা যেমন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল, তেমনই তার ভিতরের পুর বদলাতে শুরু করেছিল। আর সেভাবেই একসময় সিঙ্গারা ভারতে একটি অন্যতম নিরামিষ মুখরোচকে পরিণত হয়।