এই কাহিনি ষোড়শ শতকের। মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাজগড়ের সাঁকা শ্যামজী গ্রামে চলছিল মন্দিরের নির্মাণকার্য। নির্বিঘ্নে একটু একটু করে মন্দির গড়ে তুলছিলেন কারিগররা। একদিন হল কি, গ্রামের এক মহিলা মন্দিরের সামনে গম ভাঙার কাজ করছিলেন। গম ভাঙার তীব্র আওয়াজে কাজে ঠিক করে মন দিতে পারলেন না কারিগররা। এতে ভগবান সাঁকা শ্যামজী ভীষণ রেগে গেলেন। তিনি অভিশাপ দিলেন, এই গ্রামে কোনও সন্তানসম্ভবা মহিলা কোনও দিন সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন না। গ্রামের মধ্যে সন্তানের জন্ম হলে হয় নবজাতক বা মায়ের মৃত্যু হবে, নতুবা তাদের গোটা শরীরে পচন ধরে যাবে।
দেখতে দেখতে এই লোককথার বয়স পেরিয়ে গেছে ৪০০ বছর। আজও সাঁকা শ্যামজী গ্রামের বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, তাঁদের জন্মভূমি ‘অভিশপ্ত’। এতগুলো বছর ধরে সদ্যোজাত শিশুর কান্নার আওয়াজে মুখরিত হয়নি এই গ্রাম। ষোড়শ শতক থেকে একপ্রকার বন্ধ্যা জমিতে পরিণত হয়েছে এই এক টুকরো জমি। সদ্যোজাতকে রক্ষা করতে গ্রামের ভিতর কোনও দিন কোনও মহিলাকে সন্তানের জন্ম দিতে দেননি তাঁর পরিবারের লোকজন। প্রসবের সময় এলেই হবু মায়েদের হয় ভর্তি করা হয়েছে গ্রামের বাইরে হাসপাতালে। অথবা, ভিটে ছেড়ে পাশের গ্রামে সন্তান প্রসবের জন্য নির্মিত বিশেষ ঘরে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হয়েছেন মায়েরা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যেখানে স্পর্ধা ছাড়িয়ে পৌঁছেছে সাফল্যের মিনারে, সেখানে এখনও কেন প্রাচীন অন্ধবিশ্বাস মনেপ্রাণে লালন পালন করে চলেছেন গ্রামবাসীরা? তারও উত্তর দিচ্ছেন গ্রামবাসীরাই। তাঁদের দাবি, এরমধ্যে একবার দু’বার গ্রামের মধ্যে শিশুর জন্ম হয়েছে বটে। কিন্তু অভিশাপের ছায়া যে সত্যি সত্যি আজও পিছু ছাড়েনি তাঁদের, তার প্রমাণ মিলেছে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মলাভ বা সদ্যোজাতের মৃত্যুর ঘটনায়। ঠিক এই কারণেই যেকোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ গ্রামে আছড়ে পড়ুক, ওই অবস্থাতেই আসন্ন সন্তানকে রক্ষা করতে গ্রামের বাইরে পা রাখতে বাধ্য হন সন্তানসম্ভবা নারীরা। শুধু সন্তান প্রসবই নয়, সাঁকা শ্যামজী গ্রামে সুরাপান, মাংস ভক্ষণেও মেনে চলা হয় কড়া বিধি নিষেধ। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, ঈশ্বরের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে চলায় তাঁদের গ্রাম অন্যান্য গাঁয়ের থেকে অনেক বেশি পবিত্র।