সামনে প্রাণঘাতী তুষারঝড়ের কঠিন প্রতিবন্ধকতা। লক্ষ্য একটাই। তুষারপ্রদেশ অ্যান্টার্কটিকার দুর্গম শৃঙ্গ ভিনসন ম্যাসিফের চুড়ো ছোঁয়া। হোক না তার উচ্চতা কম। কিন্তু মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ওটাই তখন দুস্তর পারাবার। অসহ্য ঠান্ডা, জমাট অন্ধকার। তবু নির্ভয়ে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে শনিবার ভোরে ভিনসন ম্যাসিফ জয় করলেন সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। আর সেইসঙ্গেই পৃথিবীর সপ্তমহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের নজির গড়লেন আর এক বাঙালি। এর আগে দিল্লিবাসী বাঙালি সত্যব্রত দাম সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধি হিসাবে সপ্তশৃঙ্গ জয় করেছিলেন। অসামরিক ক্ষেত্রে একজন বঙ্গসন্তান হিসাবে প্রথম এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন সত্যরূপ সিদ্ধান্ত।
এশিয়ার মাউন্ট এভারেস্ট, ইউরোপের এলবুর্জ, আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো, অস্ট্রেলিয়ার কসকুসকো, উত্তর আমেরিকার ম্যাকিনলে আর দক্ষিণ আমেরিকার আকোংকাগুয়া। ২০১২ সাল থেকে পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দেখেছে দু চোখে স্বপ্নমাখা এক ভারতীয় অভিযাত্রীর প্রবল আত্মবিশ্বাস। ২০১৬ সালে মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের পর শেষ মহাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দেন সত্যরূপ। গত ৭ ডিসেম্বর থেকে সহযাত্রীদের সঙ্গে মূল অভিযানে নামেন বাঙালির গর্ব সত্যরূপ। গত শুক্রবার ৫ দুঃসাহসিক সঙ্গীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভিনসন ম্যাসিফের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। যাত্রাপথে আবহাওয়া তাঁদের সঙ্গ নাও দিতে পারে বলে খবর পৌঁছয় অভিযাত্রীদের কাছে। কিন্তু তার বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে এগিয়ে যান তাঁরা।
শনিবারের পর সপ্তমহাদেশের সপ্তশৃঙ্গ জয়ের সাফল্যে তাই স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত সত্যরূপ ও তাঁর পরিবার। পায়ের তলায় সর্ষে যাঁর, তাঁর কাছে কোনও বাধা, তা সে প্রাকৃতিক হোক বা অর্থনৈতিক, বড় ব্যাপার নয়। তাই ধার-দেনা কিংবা সঞ্চিত পুঁজি সম্বল করে নিজের স্বপ্নপূরণের পথে একের পর এক সাফল্য পেয়ে ভারতীয় হিসেবে গর্বিত সত্যরূপের পাখির চোখ এবার উত্তর মেরুর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়।