সন্তুষ্ট হন শাক ভোগে, মনোবাসনা পূরণকারী অত্যন্ত জাগ্রত দেবীর মাহাত্ম্যকথা
দয়াময়ী দেবী মহাশেোক দূর করেন, রক্ষা করেন মহাবিপদ আপদ থেকে। দমন করেন দুষ্টকে। দেবীর অতি প্রিয় শাক। দেবীকে শাক ও ফল ভোগরূপে দেওয়াই দস্তুর।
হাওড়া থেকে ধরেছি কুম্ভ এক্সপ্রেস। ভাড়া বেশি। সারাটা পথে ট্রেনে জল নেই, পথে খাওয়া পাওয়া যায় না। রেল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল ট্রেনের নামকরণের আগে জ্যোতিষীর পরামর্শ গ্রহণ করা। নামটা কুম্ভকর্ণ এক্সপ্রেস হলেই ভালো হত। সারাটা পথই এল ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। মশা আরশোলা আর নেংটি ইঁদুরের সঙ্গ করতে করতে রেলের প্রশাসনিক অপদার্থতায় কুম্ভরানি যখন হরিদ্বারের প্ল্যাটফর্মে আমাদের প্রসব করে গর্ভযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেল তখন ভারতীয় রেলের নির্ধারিত সময় সাড়ে চার ঘন্টা পার হয়ে গেছে। প্ল্যাটফর্মে নেমে অভিযোগ করতে গিয়ে শুনলাম এক প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতার সুরে সুর মেলানো কথা, ‘এমন তো রোজই হয়।’ ফিরে এলাম অভিযোগ না করে। ভাবছি নর্মাল, সিজার না এ্যাবনর্মাল, এটা রেলের কোন ধরনের ডেলিভারি?
পুরাণ-প্রসিদ্ধ শাকম্ভরী দেবীর নাম শোনা ছিল তবে তাঁর অবস্থানটা জানা ছিল না। কোনও বাঙালির মুখেও এঁর নাম কখনও শুনিনি। ১৯৭০ সালে নভেম্বরের ঠান্ডায় এসেছিলাম, তারপর অনেকবারই আসা তবে ঠান্ডায় নয়। ভাবলাম, ঠান্ডায় পাহাড়ে কোথাও গিয়ে লাভ নেই। গাড়িও যেতে চায়না। তাই হরিদ্বারে যখন যাচ্ছি তখন আশপাশে না যাওয়া জায়গার খোঁজ করতে গিয়ে পেয়ে গেলাম দেবী শাকম্ভরীর খবর।
হরিদ্বারে এক রাত কাটিয়ে মোটর ভাড়া করে চললাম দেবী শাকম্ভরীর উদ্দেশে। শহর ছেড়ে মোটর ধরল শহরতলির পথ। একটানা ৮৫ কিমি চলার পর এলাম সাহারাণপুরে। উত্তরাখন্ড ছেড়ে এসেছি উত্তরপ্রদেশে। মহাভারতীয় যুগের দ্বৈতবনই আজকের সাহারাণপুর। পুরাণের কালে জন্ম হয়েছিল মিমাংসা দার্শনিক ঋষি জৈমিনির।
সাহারাণপুর থেকে ২৮কিমি দূরত্বে শিবালিক পর্বতের সানুদেশে দেবী শাকম্ভরী মন্দির। শহর ছাড়ার পর এ পথে কখনও সবুজ শস্যক্ষেত আবার কখনও পথের দুধারে ঘন গভীর জঙ্গল। মাঝখান দিয়ে কুচকুচে কালো পিচের রাস্তা। পথে কোথাও থামাথামির ব্যাপার নেই। মোটর থামল শাকম্ভরীতে। হরিদ্বার থেকে ১১৩ কিমি আসতে সময় লাগল দুঘন্টা কুড়ি মিনিট।
অল্প কিছু সিঁড়ি ভেঙে মন্দিরঅঙ্গনে উঠলেই বাঁপাশে একটি বিশাল অশ্বত্থ গাছ। এর তলায় ছোট্ট একটি মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহ কালভৈরবের। শাকম্ভরী তীর্থের দ্বাররক্ষক। কুচকুচে কালো পাথরের বিগ্রহ। মন্দিরের গায়ে লেখা, ‘শ্রী ভৈরব বাবাজি’।
মূলদেবীমন্দির ডান দিক থেকে পরিক্রমা করলে প্রথমে পড়ে মহাবীর হনুমানজির সিঁদুর রাঙানো বেশ বড় বিগ্রহ। এর গায়ে লাগোয়া মন্দিরে গণেশজি। কয়েক পা এগোলে শাকম্ভরী মন্দিরের ঠিক পিছনের ছোট্ট মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহ মা কালীর। এর পাশেই একটি মন্দির। এটি জ্বালামুখী মায়ের। ক্রমান্বয়ে এই কটি মন্দিরই পড়ে শাকম্ভরী মন্দির পরিক্রমা কালে।
দেবী মন্দিরের উপরে তিনটি ছোট্ট চূড়া। একেবারেই সাদামাটা অনাড়ম্বর মন্দির। শিল্পের এতটুকু ছোঁয়া নেই মন্দিরের গায়ে। তবুও মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে দেবীর গুণপনায় মুগ্ধ হয়ে, করুণাধারায় স্নাত হতে। তারা জানে, কিছু চাইলেই তা মঞ্জুর হবে। জম্মুতে বৈষ্ণোদেবীর মতো দরাজ হাত মা শাকম্ভরীর। প্রার্থনা করলে তা মঞ্জুর হবে না, মা শাকম্ভরীর কোষ্ঠিতে এমন কথা লেখার হিম্মত হয়নি কোনও জ্যোতিষীর।
প্রতিদিন মা ভগবতী শাকম্ভরীকে স্নান ও পূজার্চনা করা হয় ফলমালা দিয়ে। দেবীর শৃঙ্গারে লাগে কুমকুম, কেশর, কস্তুরী ও অন্যান্য সুগন্ধি দ্রব্য। যাত্রীরা ধূপ মোমবাতি এলাচ লবঙ্গ ও পান সুপারে দেয় দেবীর উদ্দেশ্যে। সকাল ও সন্ধ্যায় দেবীর আরতি হয় দুবেলা।
নিত্য দেবীর ভোগ হয় নিয়ম করে। নারকেল মেওয়া আখরোট ও নানান ধরনের ফল দেওয়া হয় নিবেদিত ভোগে। তবে এর সঙ্গে অবশ্যই থাকে দেবী শাকম্ভরীর অতি প্রিয় শাক। যখন দুর্গম দৈত্যের অনাচার ও অত্যাচারে অনাবৃষ্টি হয় তখন দেবী ভগবতী নিজ শক্তিবলে দেহ থেকে শাক, নানা ফল ও কন্দমূল উৎপন্ন করে রক্ষা করেছিলেন আর্ত প্রাণিদের। তাই এই তীর্থে নিবেদিন যে কোনও দ্রব্যের সঙ্গে শাকম্ভরী দেবীকে শাক ও ফল ভোগরূপে দেওয়াই দস্তুর।
এবার শাকম্ভরী দেবীর রূপ-কথা। মন্দিরের গর্ভগৃহে দিব্যপ্রভাবযুক্ত মুকুটমন্ডিত বিগ্রহ দর্শন করে আচার্য শঙ্কর ত্রিলোক মোহিনী রূপের প্রতি নতমস্তক হন বলে পরম্পরাগত কথা। আচার্যের স্মৃতির স্মরণে এখানে আছে শঙ্করাচার্য আশ্রম।
গর্ভমন্দিরে সোজাসুজি তাকালে দেখা যায় প্রায় একই উচ্চতায় তিনটি বিগ্রহ। প্রতিটি বিগ্রহের মাথায় রুপোর মুকুট, উপরে তীর্থযাত্রীদের দেওয়া রুপোর ছাতা। তিনটি বিগ্রহ লাল শাড়িতে গলা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা। গায়ে মেটে সিঁদুরের রং। দেবী দর্শন করতে হয় দূর থেকে, ফলে বিগ্রহের রূপের ধারণা করা যায় না পরিস্কারভাবে। তিন বিগ্রহের মধ্যে মাঝেরটি দেবী শাকম্ভরী, দেবীর বামপাশে দেবী শতাক্ষী, শাকম্ভরীর পাশে দৈত্যদলনী ভগবতী ভীমা দেবী তথা ভ্রামরী। এই দেবী বিগ্রহের ডান পাশে মাঝারি আকারের বিগ্রহটি সিদ্ধিদাতা গণেশের। সমস্ত বিগ্রহগুলি সুসজ্জিত পাথরের আসনবেদিতে। সারা উত্তর ভারত জুড়ে দেবী শাকম্ভরী মনোবাসনা পূরণকারী অত্যন্ত জাগ্রত দেবী বলে প্রসিদ্ধিলাভ করেছে। বছরভর লক্ষ লক্ষ লোক সমাগম হয় বিভিন্ন প্রদেশ ও প্রান্ত থেকে।
দয়াময়ী দেবী শাকম্ভরী মহাশেোক দূর করেন, রক্ষা করেন মহাবিপদ আপদ থেকে। দমন করেন দুষ্টকে। দেবীর জপতপ ধ্যান ও পুজো করলে অতিদ্রুত জাগতিক কষ্টের হাত থেকে মুক্তি ও অমৃতরূপী অক্ষয় ফললাভ হয়, একথা বলেন মন্দিরের নিত্যসেবক।
শিবালিক পর্বতমালায় প্রসিদ্ধ শাকম্ভরী দেবীকে অনেকে সতীর ৫১ পীঠের একটি বলে মনে করেন। এখানে নাকি দেবীর মাথা পড়েছিল। লোকবিশ্বাস, শাকম্ভরী দেবীর উপাসনা করলে গৃহ ‘শাক’ অর্থাৎ ভোজন দ্রব্যে সর্বদা পরিপূর্ণ থাকে। পুরাণের কথা, শাকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শাকম্ভরী।
দেবী আদ্যাশক্তির অন্য নাম শাকম্ভরী। পুরাণের কালে শতবর্ষ অনাবৃষ্টি হলে দেবী নিজের দেহ থেকে উৎপন্ন করেন জীবনধারক শাক, যা দিয়ে তিনি পোষণ করেছিলেন পৃথিবীর মানুষকে। সেই থেকে দেবী আদ্যাশক্তির প্রসিদ্ধি শাকম্ভরী নামেষ এ কথা মার্কন্ডেয় পুরাণের।
শ্রীশ্রীচন্ডীতেও পাওয়া যায় শাকম্ভরীর আখ্যান। শ্রীশ্রীচন্ডীতে দেবী দুর্গা স্বয়ং বলেছেন-
“হে দেবগণ, পৃথিবীতে যখন একশত বর্ষব্যাপী অনাবৃষ্টিতে শস্য শুকাইয়া গিয়াছিল তখন আমিই শাকরূপ ধারণ করিয়া জগৎ রক্ষা করিয়াছিলাম। তাই আমার এক নাম শাকম্ভরী।”
শ্রীশ্রীচন্ডীতে শাকম্ভরী দেবীর রূপবর্ণনা ও পুজোর ফলাফলের কথাও উল্লেখ আছে এইভাবে-
“শাকম্ভরী দেবী নীলবর্ণা, নীলপদ্মের মতো চক্ষুযুক্তা। ইঁহার নাভি গভীর এবং উদর সরু ও তিনটি রেখাযুক্ত।।
তাঁহার দুইটি স্তন অত্যন্ত কর্কশ, সমান, উঁচু, গোলাকার, কঠিন ও ঘন। তাঁহার মুঠায় যে পদ্মফুল আছে তাহা ভ্রমরে ছাইয়া রহিয়াছে।।
তিনি ক্ষুধা, তৃষ্ণা, মৃত্যু ও জরাদির বিনাশকারী নানা রসযুক্ত পুষ্প, পল্লব, মূল ও ফলযুক্ত শাকরাশি ধারণ করিয়াছেন।।
এই পরমেশ্বরী, শতাক্ষী, শাকম্ভরী, দুর্গারূপিনী দেবী উজ্জ্বল ধনু ধারণ করিয়া আছেন।।
তিনি উমা, গৌরী, সতী, চন্ডী, কালিকা এবং পার্বতী। তাঁহাকে স্তব, ধ্যান, জপ, পূজা ও প্রণাম করিলে শীঘ্র শীঘ্র অফুরন্ত অন্ন (খাদ্য) পানীয়, অমৃত ও জল ভোগ করতে পারে।।”
লক্ষ্মীতন্ত্রের কথায়, ‘বর্তমান মন্বন্তরের চল্লিশতম মানবযুগে (এখন চলছে আঠাশতম যুগ) রূপ গ্রহণ করবেন দেবী শাকম্ভরী।’
উত্তরাখন্ডে ভ্রমণকালীন দেখেছি শাকম্ভরী মাতার স্থান। ত্রিযুগীনারায়ণের পথে প্রায় সাত হাজার ফুট উপরে দেবীর অবস্থান। এখানে চীরবাসা অর্থাৎ বস্ত্র দিয়ে পুজো করার রীতি। শিব পার্বতীর বিবাহ হয় ত্রিযুগী নারায়ণে। হোমাগ্নি জ্বলছে সত্যযুগ থেকে। তীর্থযাত্রীরা এখানে হোমকুন্ডে কাঠ দিয়ে আহুতি দেয়।
রাজস্থানের জয়পুরে আছে শাকম্ভরী দেবীর মন্দির। হরিদ্বারে বিল্বকেশ্বর মহাদেব মন্দিরসংলগ্ন একটি মন্দিরে স্থাপিত রয়েছে দেবীর মনোহর পাথরের বিগ্রহ। অষ্টভুজা।
পশ্চিমবঙ্গে দেবী শাকম্ভরীর মন্দির ও বিগ্রহ পুজো হয় একমাত্র বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার অন্তর্গত নিভৃত পল্লী মাজিগ্রামে। বর্ধমান-কাটোয়া সড়কপথে (রেলপথও আছে) পড়ে কৈচর। এখান থেকে দুটি গ্রাম চৈতন্যপুর ও মাথরুণ পেরিয়ে মাজিগ্রাম প্রায় সাড়ে ৬ কিমি।
মাজিগ্রামে দেবী শাকম্ভরী সিংহবাহিনী ও চতুর্ভুজা। চার হাতে আছে যথাক্রমে শঙ্খ চক্র কৃপাণ ও ত্রিশিখ। কোনও অসুর বা অন্য কোনও দেবদেবীর বিগ্রহ নেই শাকম্ভরীর সঙ্গে। মূর্তি থেকে দেবীর মাথাটি বিচ্ছিন্ন তাই এঁটে রাখতে হয় মোম দিয়ে। চোখদুটি শ্বেতপাথরের, মধ্যে কালোপাথরের মণি বসানো। উচ্চতায় এক হাত, চওড়ায় আধ হাত। কালোপাথরের শাকম্ভরী দেবী এখানে তেল ও সিঁদুর রাঙানো।
বিশেষ পুজো হোম ও উৎসব হয় আষাঢ় মাসে শুক্লানবমীতে। পুজোর সময় এদিন বিশেষ হোম হয়। লোক বিশ্বাস ও প্রবাদ, এই সময় বৃষ্টি হলে সে বছর নাকি খুব ভালো ধান হয়। আগের মতো জাঁকজমক না থাকলেও প্রতিবছর ওই সময় মেলা বসে শাকম্ভরীতলায়।
যাইহোক, মন্দির ও শাকম্ভরী বিগ্রহ দর্শন করে নেমে এলাম। সিঁড়ির শেষ থেকেই শুরু হল মিষ্টি আর তেলেভাজার দোকান। এরপর সারি দিয়ে ফটোর দোকান। এগুলো বাদ দিয়ে মন্দিরের বাঁদিকে বিস্তৃত ফাঁকা অঙ্গন। এর নাম বীরক্ষেত। লোকবিশ্বাস, দুর্গম অসুরের সঙ্গে দেবী ভগবতীর যুদ্ধ হয়েছিল এই প্রাঙ্গনে। বর্তমানে স্থানটি রাজপরিবার ব্যবহার করে স্টেটের শ্মশানভূমি হিসাবে। এরপর লাগাতার গাঢ় সবজেভরা শিবালিক পর্বতমালা।
শ্মশানভূমির পাশ দিয়ে নন্দিনী নামে একটি ঝরণা বর্ষাকালে বয়ে যায় দেবী শাকম্ভরীর চরণছুঁয়ে। এ ধারা নেমে আসে শিবালিক থেকে। বর্ষাকাল ছাড়া নন্দিনীতে জল থাকে না ফি-বছর।
মা ভগবতী তথা শাকম্ভরীর কাছে যাত্রী সমাগমে ঘাটতি নেই। সারা বছর লোকোর যাতায়াত লেগেই আছে। তবে অসম্ভব ভিড় হয় আশ্বিনমাসের শুক্লা প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা, চৈত্রমাসে শুক্লা প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমা, ফাল্গুনমাসে শুক্লা অষ্টমী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত। এসময় শাকম্ভরীতে জাঁকিয়ে মেলা বসে। এছাড়া প্রতিমাসে ছোট মেলা বসে শুক্লা অষ্টমী ও চতুর্দশী তিথিতে। এই তিথিগুলিতে দেবীর দর্শন শুরু হয় ভোর চারটে থেকে। এসময় দর্শনের জন্য শীত গ্রীষ্ম বর্ষার কোনও তোয়াক্কাই করে না দর্শনার্থীরা।
প্রতিদিন যথানিয়মে পুজোর পর রাতে দেবীর শয়ন দেওয়া হয় যথা সময়ে। চৈত্রমাসে শুক্লা প্রতিপদ থেকে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা পর্যন্ত মন্দির বন্ধ হয় রাত ৯ টায়। কার্তিকমাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ থেকে চৈত্রের অমাবস্যা পর্যন্ত মন্দির বন্ধ হয় রাত ৮ টায়।
সারা বছরে মন্দির বন্ধ থাকে না মাত্র তিনদিন। আশ্বিন মাসে শুক্লপক্ষের চতুর্দশী ও পূর্ণিমা এবং চৈত্রমাসে শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে। এই তিনদিন সারা দিনরাত দেবীদর্শন করতে পারে দর্শনার্থীরা। এ সময় ভিড়ও হয় অসম্ভব কারণ এ তিন দিন বড় মেলা বসে। মেলা শেষে কুলপরম্পরানুসারে জসমীর স্টেটের রাজপরিবার দেবী শাকম্ভরীর বিশেষ পুজো করে রাজোপচারে।
দেবী শাকম্ভরী জয়ন্তি উৎসব পালিত হয় পৌষ মাসের পূর্ণিমাতে। ওই দিন বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয় দেবী মন্দিরে। পুজারির কথায়, পূর্বে বিশাল উৎসব হত পৌষ পূর্ণিমাতে। পরিস্থিতের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠান অনেক ছোট হয়ে গিয়েছে। এ দিন দেবীর প্রিয় বস্তু শাক, কন্দমূল, ফল ও বিভিন্ন সবুজ সবজি দিয়ে শৃঙ্গার করা হয় মায়ের। নানা ধরণের ফুর দিয়ে সাজানো হয় গর্ভমন্দির পর্যন্ত। রাজপরিবার থেকে এদিন ভোগ দেওয়া হয় মায়ের প্রিয় বস্তু সরালক, তরন্দ্র, সকর, কন্দমূল, হালুয়া প্রভৃতি। রাত জাগা, কীর্তন, দেবীকথা পাঠ চলে সানন্দে। আরতি হয় বাজনার সঙ্গে।
ধনবান ব্যবসায়ীদের একটি প্রসিদ্ধ শহর বলা যায় সাহারাণপুরকে। রেল ও সড়ক পথে যোগাযোগের সুবিধা থাকায় এই নগরের সুখ্যাত দেবী শাকম্ভরীর কাছে যেতে সুবিধা হয় শ্রদ্ধালুদের। যেকোনও প্রান্ত থেকে সাহারাণপুর বাস ডিপোতে পৌঁছালেই হল। এখান থেকে বাস যাচ্ছে শাকম্ভরী ২৬ কিমি। দেরাদুন থেকেও বাম যাচ্ছে সাহারাণপুর বনবিভাগের সড়ক ধরে। হরিদ্বার থেকে প্রাইভেট মোটর ভাড়া করে যাওয়া যায়। আসা যাওয়ার ভাড়া ১৬০০-১৮০০ টাকা। সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা।
শাকম্ভরীতে রাতে থাকার প্রয়োজন হয় না। দেখার যা কিছু তা দেখা হয়ে যায় আধঘন্টায়। হোটেল বলে এখনও কিছু নেই। খান কয়েক ধর্মশালা আছে। বিশেষ তিথি উৎসবে খোলা থাকে। অন্য সময় ইয়া বড় তালা ঝোলে ধর্মশালার দরজায়।
(ছবি – শিবশংকর ভারতী)