কিভাবে ছলনায় জন্ম হল শনিদেবের, কেন আত্মহনন করলেন তাঁর মা
সেই পৌরাণিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত শনিদেবের অশুভ প্রভাবে পড়তে হয় রথীমহারথী থেকে সাধারণ মানুষজনকে।
সেই পৌরাণিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত শনিদেবের অশুভ প্রভাবে পড়তে হয় রথীমহারথী থেকে সাধারণ মানুষজনকে। দেবকুলের ললিতকলা শিল্পী বিশ্বকর্মা নন্দিনী সংজ্ঞা, যিনি রূপলাবণ্যময়ী মধুরভাষিণী যোগবতী মহাতপস্বিনী। সর্বগুণালংকার। এই নারী যেন একুশ কোটি ঋষির গুণ সমতুল্য। সূর্যপত্নী দশ সংস্কারের এক সংস্কার এই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন অতীন্দ্রিয় রাজ্যে জিতেন্দ্রিয় পুরুষ উগ্রবীর্য ভগবান সূর্যদেব। পুষ্করতীর্থে তপস্যান্তে তিনবছর অন্তর গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। উগ্রবীর্য ও তেজঃপ্রভাবে সংজ্ঞাদেবীর গর্ভজাত প্রথম কৃষ্ণকায় পুত্র ধর্মরাজ যমদেব। যিনি সত্য ন্যায় ও নিষ্ঠাপরায়ণ, ন্যায়-অন্যায় বিচারের অধিকর্তা। দেবী সংজ্ঞার আর একটি সন্তান সূর্যদেবের উগ্রবীর্য ও তেজঃপ্রভাবে গর্ভস্থিত বিনষ্টপ্রাপ্ত বহমান পূত কন্যা পুণ্যসলিলা যমুনা।
সংসার জীবনে কালক্রমে সংজ্ঞাদেবী সূর্যদেবের তেজপূর্ণ উগ্রবীর্য ধারণে অসমর্থ হয়ে পড়লেন। সংকল্প করলেন পিতৃগৃহে বিশ্বকর্মার কাছে ফিরে গিয়ে হবেন তপস্যারতা। চিন্তামাত্র স্বামীগৃহ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কুলটা হবেন তিনি। সতী সাধ্বী নারী সংজ্ঞা ভাবলেন, কে করবে স্বামীর পরিচর্যা, কে হঠাৎ স্বামীর সুখ- দুঃখের জীবনসঙ্গিনী, কে করবে সন্তানদের লালনপালন।
পথ অতি সহজ সরল। তপস্বী সূর্যদেবের পত্নী যোগবতী সংজ্ঞা তপস্যালব্ধ যোগবলে নিজেও হয়েছেন বলীয়ান। যোগবলে সৃষ্টি করলেন এক সমরূপা নারী। সুন্দরী রূপবতী। নাম ছায়া। সংজ্ঞার আজ্ঞাবহ এ নারী সংজ্ঞার পরিপূরক হিসাবে কাজ করবেন সূর্যদেবের। সূর্যপত্নী ফিরে এলেন তাঁর কারুমণ্ডিত পিতৃগৃহ দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার প্রাসাদে।
ছায়াদেবী এখন সূর্যপত্নী সংজ্ঞা। দীর্ঘ তিনবছর পর পুষ্কর তীর্থে তপস্যান্তে সূর্যদেব ফিরে এলেন আপনগৃহে। এবার গর্ভবতী হলেন ছায়া। তাঁরই গর্ভজাত সন্তান হলেন নিষ্কলঙ্ক মহাযোগী ভগবান শনিদেব। সূর্যদেবের উগ্রবীর্য ও তেজঃপ্রভাবে এ সন্তানেরও গায়ের রং হল ঘোর কৃষ্ণবর্ণ।
এদিকে ছায়াদেবীর ব্যবহারাদির সঙ্গে অনেকাংশই মিল হত না সংজ্ঞার। সূর্যদেব তপস্বী। সাংসারিক জীবনে যতটুকু আত্মনিয়োগের প্রয়োজন তার অধিক তিনি দৃষ্টিপাত করতেন না। কিন্তু যা সত্য নয় তা একদিন না একদিন প্রকাশ পাবেই। হলও তাই, একদা সূর্যদেবের দৃষ্টিগোচর হল যম ও যমুনার প্রতি ছায়ার অত্যাচার ও অবিচার ব্যবহার, যা সংজ্ঞার স্বভাব ও চরিত্র বহির্ভূত। কিন্তু বাক্চাতুর্য নিপুণা ছায়া স্নেহসিক্তরসে মনোরঞ্জন ও নানান অজুহাতে করেন স্বামীর সন্দেহমোচন।
কিন্তু এইভাবে আত্মগোপন করে নারী জীবনযাপন দুঃসহ দুর্বিষহ, ঘৃণ্য। প্রতিটা মুহুর্ত গ্রাস করে রেখেছে অন্তর জ্বালাময়ী দুশ্চিন্তায়। এ থেকে কি কোনও মুক্তি পাওয়ার উপায় নেই?
আবার ভাবেন, যদি সংজ্ঞার পুনরাগমন ঘটে? এদিকে সূর্যদেব জানতে চেয়েছেন ছায়ার প্রকৃত সত্য পরিচয়। কিন্তু এ যে একেবারেই অসম্ভব, কোনওমতেই সে পরিচয় দেওয়া চলে না। নারী হয়ে এইভাবে দিনাতিপাতের চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়। ক্ষোভে, দুঃখে, অভিমানে একসময় উদ্বন্ধনে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন আত্মবিলাপরতা ছায়া।