মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলের যে গুটিকয়েক নেতাকে ভাইফোঁটা দিয়ে থাকেন তার মধ্যে পড়তেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। স্নেহের কানন ছিলেন মমতার খুবই কাছের মানুষ। সেই সম্পর্কে চিড় ধরে শোভনের ব্যক্তিগত জীবন ও দলের কাজে কম সময় দেওয়াকে সামনে রেখে। তারপর জল অনেকদূর গড়ায়। যে শোভন চট্টোপাধ্যায় প্রতি বছর নিয়ম করে মমতার বাড়িতে ভাইফোঁটা নিত আসতেন, তিনি গত বছর মমতার বাড়িতে হাজির হননি। নেননি ভাইফোঁটা।
তারপর অনেকগুলো দিনের জন্য নিজেকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে নেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। অবশেষে গত ১৪ অগাস্ট বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। সঙ্গে বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে তিনি হয়ে গেলেন রাজ্যের অন্যতম বিজেপি নেতা। কিন্তু গেরুয়া শিবিরে যোগদানের মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই মোহভঙ্গ হয় শোভন-বৈশাখীর। প্রায় একরকম কৈলাস বিজয়বর্গীয়র কাছে দল ছাড়ার প্রস্তাবই দিয়ে ফেলেন তাঁরা। বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব ক্রমশ প্রকট হতে থাকে। সামনে আসতে থাকে।
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর সক্রিয়ভাবে বিজেপির জন্য কাজ করতে কিন্তু শোভনবাবু বা বৈশাখীদেবীকে দেখা যায়নি। বরং শুরু থেকেই কেমন যেন দূরত্ব রেখেই চলছিলেন তাঁরা। কিন্তু তা যে তৃণমূলে ফেরার ইঙ্গিত তা মনে হয় হয়নি কারও। অবশেষে ভাইফোঁটার দিন তা মনে হল। ভাইফোঁটার দুপুরে যখন একে একে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব ভাইফোঁটা নিতে মমতার কালীঘাটের বাড়িতে হাজির হচ্ছেন, তখন সেখানে হাজির হন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝে একটা বছরের বিরতি। তারপর ফের ভাইফোঁটায় দিদির কাছে হাজির ভাই কানন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে এদিন শোভনবাবুর আসাটা কী নেহাতই আচমকা ছিল? বোধহয় পুরোটাই নয়। কেবল অনেকেই হয়তো সেকথা জানতেন না। কারণ ভাইফোঁটার আগেই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হয় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর তারপরেই শোভনবাবু সোজা হাজির মমতার কাছে ফোঁটা নিতে।
যেটুকু জানা গেছে যে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ঘরোয়া মেজাজেই ছিলেন শোভনবাবু। কিন্তু এর পিছনে অন্য ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। তাঁদের ধারণা এটা আসলে বরফ গলা শুরু। যা প্রকাশ্যে এসে পড়ল। নাকি প্রকাশ্যে আনাই হল? বিজেপির কাছে কী তবে বার্তা পৌঁছে গেল যে শোভন-বৈশাখী এবার হয়তো দল ছাড়তে চলেছেন! রাজনৈতিক মহল কিন্তু মনে করছে এদিনের ভাইফোঁটা কিন্তু অনেক কথা বলে গেল। সোজাসাপ্টা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূলে ফেরার ইঙ্গিত স্পষ্ট করল।