রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে নিদাহাস ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজের ফাইনালে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। রবিবার তারা ফাইনালে মুখোমুখি হবে ভারতের। কিন্তু যে দেশের মাঠে এই খেলা, সেই দেশই ছিটকে যাওয়ায় অবশ্যই হতাশ শ্রীলঙ্কার মানুষ।
অন্যদিকে ভারতের কাছে এই প্রতিযোগিতায় দুবারই হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ফাইনালের মানসিকতা অন্যরকম। সেখানে শ্রীলঙ্কাকে হারানো বাংলাদেশ অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী।
সাকিব আল হাসানকে দলে পেয়ে বাংলাদেশ দলটাও অনেকটা যেন বেশি অক্সিজেন পেয়েছে। কিন্তু এসবের মধ্যেও বাংলাদেশের জন্য একটা কাঁটা কিন্তু বিঁধে রইল। তা হল আইসিসি-র তরফে শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ নিয়ে এখনও কিছু না জানানো।
গত শুক্রবার সেমিফাইনালে পরিণত হওয়া শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ ম্যাচে শেষ ওভারেই ঘটল সবকিছু। জেতার জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ৬ বলে ১২ রান। কিন্তু উদানার প্রথম বল শর্ট পিচ বাউন্সার সামলাতে ব্যর্থ হন মুস্তাফিজুর। যেখানে এক বলও দামি সেখানে বল মিসটা পারদ চড়াচ্ছিল। দ্বিতীয় বলও প্রায় একই বাউন্সার। ব্যাটে বলে না হলেও মুস্তাফিজুর ছুট লাগান। অপর প্রান্ত থেকে তখন মাহমুদুল্লাহও ছোটেন। তাতে রান আউট হন মুস্তাফিজুর। কিন্তু এবার মাহমুদুল্লাহ লেগ আম্পায়ারকে জানান একই ওভারে ২টি বাউন্সার দিয়েছেন উদানা। ফলে দ্বিতীয় বলটা নো হওয়া উচিত। আম্পায়ার নো দেন।
এবার শ্রীলঙ্কা ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিবাদে। নাকচ হয় নো বল। তাতে পাল্টা প্রবল প্রতিবাদ আসে বাংলাদেশের তরফ থেকে। শুরু হয় বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের মধ্যে বচসা। আঙুল তুলে দুপক্ষ একে অপরের দিকে তেড়ে যায়। এর মাঝে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব বাউন্ডারি লাইনের কাছে এসে রাগে ফেটে পড়েন। তাঁর দলের ব্যাটসম্যানদের মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত করতে থাকেন। যদিও পরে তা পরে অস্বীকার করেন সাকিব। তাঁর দাবি তিনি উল্টে ওদের খেলতেই বলছিলেন।
প্রবল উত্তেজনা প্রশমিত করে হাতে ৪ বল, করতে হবে ১২ রান, এই অবস্থায় ফের খেলা শুরু হয়। আর সেখানেই প্রথম বলে ৪ মারেন মাহমুদুল্লাহ। পরের বলে ২ রান নেন। আর শেষের আগের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে রুদ্ধশ্বাস জয় উপহার দেন। এমন স্বপ্নের জয়ে আনন্দ করাটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পোষা রাগ এবার অন্যভাবে প্রকাশ করতে শুরু করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
সকলে মাঠের মধ্যেই নাগিন ডান্স শুরু করেন। উস্কানি দিতে থাকেন শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের বলে অভিযোগ। ফলে ফের অবস্থা ঘোরাল হয়। একে অপরের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায় দু দলের খেলোয়াড়দের। প্রায় হাতাহাতি হয় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেখানে দু দলের খেলোয়াড়দের সামলাতে কর্মকর্তারা মাঠে নামেন।
কয়েকজন খেলোয়াড়ও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালাতে থাকেন। চেপে ধরে টেনে সরিয়ে নিয়ে যান উত্তেজিত খেলোয়াড়দের। বাংলাদেশের কোচ কোর্টনি ওয়ালশকেও খেলোয়াড়দের সামলাতে দেখা যায়। অভিযোগ পরে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ড্রেসিং রুমের কাচও ভেঙে দেন।
তাঁর অতিরিক্ত রাগ ঠিক হয়নি বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানান সাকিব। কিন্তু কীভাবে এমন উত্তেজনা সৃষ্টি হল? কী হয়েছিল? কোন কোন খেলোয়াড় নিয়ম ভেঙেছেন? তা বিস্তারিত জানতে ম্যাচ রেফারির কাছ থেকে রিপোর্ট নেবে আইসিসি। সেখানে কিন্তু সবদিক খতিয়ে দেখে দু দলের খেলোয়াড়দের শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে বলেই মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা।
অন্যদিকে ড্রেসিং রুমের কাচ ভাঙার বিষয়টিও জানতে সিসিটিভি ফুটেজ তলব করা হয়েছে। এই অবস্থায় কিন্তু খুব স্বস্তিতে থাকা হল না শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের।