চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো বলতেই চোখে ভেসে ওঠে সেখানকার আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের কথা। আর সেই রোশনাই যাঁর হাত ধরে ভারত থেকে রাশিয়া হয়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছে সেই মানুষটি হলেন শ্রীধর দাস। তাঁর খ্যাতি টের পাওয়া যাবে চন্দননগর স্টেশনে নেমেই। পথচলতি মানুষ থেকে দোকানদার, অটো-টোটো থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা, সকলেই চেনেন চন্দননগরের আলোর জন্মদাতার বাড়ি। ১৯৫৬ সালে স্কুলজীবনের গণ্ডি পেরনোর আগেই আলোর দুনিয়ায় পা রাখেন শ্রীধরবাবু। তারপর তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পেরিয়েছেন একের পর এক মাইল ফলক।
নীলকণ্ঠ ডট ইন-কে একান্ত আলাপচারিতায় শ্রীধরবাবু জানালেন, তাঁরই হাতে তৈরি এস ডি ইলেকট্রিক কোম্পানি তাঁর পুত্রসম। মাদার টেরিজা থেকে সত্যজিৎ রায়, কন্যাশ্রী থেকে ২০১৭-তে ভারতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ-১৭ বিশ্বকাপ, বিভিন্ন পুরনো ও সাম্প্রতিক ঘটনাবলী তাঁর আলোয় উঠে এসেছে। কলকাতার সেরা দুর্গাপুজোগুলোর মধ্যে পরে সিংহী পার্ক, একডালিয়া এভারগ্রীন, কলেজ স্কোয়ার, মহম্মদ আলি পার্ক ইত্যাদি। শহরের বিখ্যাত কালীপুজো বলতে ফাটাকেষ্ট বা সোমেন মিত্রর পুজো। এই সমস্ত পুজোকে আলোকিত করে তোলার গুরুদায়িত্ব দীর্ঘদিন সামলেছেন শ্রীধরবাবু।
৭৬ বছর বয়স্ক এই প্রবাদপ্রতিম মানুষটি আজ হৃদরোগে জর্জরিত। শরীর ভাল যাচ্ছে না। তাই যে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর আলোকসজ্জা করে শ্রীধর দাসের শ্রীধর ব্র্যান্ড হয়ে ওঠা, সেই চন্দননগরের আলোকসজ্জা থেকেই নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। না, কোনও অভিমান নয়। নিছক শারীরিক কারণেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত বলে জানালেন শ্রীধরবাবু।
এ বছর তাঁরই হাতে গড়া মনোজ, লাল্টু, তাপস, সোনার মতো আলোক শিল্পীরা আলোর মূর্ছনায় একসময়ের ফরাসি উপনিবেশকে আলোয় ভরিয়ে তুলেছেন। আজকাল তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বলে চন্দননগরে যাঁদের মনে করা হয়, সেইসব আলোকশিল্পীরাও তাঁর কাছেই একসময়ে কাজ শিখেছেন।
চিনা আলোয় ভারতীয় বাজার ছেয়ে যাওয়ার পর টুনির আলোর রাজত্ব বিলুপ্ত হয়েছে। এখন তো আবার এলইডি আলোর রমরমা। কিন্তু যখন মানুষ এলইডি আলো কেমন তা ভাল করে জানতেনই না, সেই সময়েও শ্রীধর দাস চন্দননগরের চারমন্দির তলায় প্রথম ফাইবারে ঢালাই করা আলো ‘টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার’ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এভাবেই আলোর জগতে জয়ী হয়েছেন একের পর এক ম্যারাথনে।
মস্কো ও লন্ডন কাঁপানো এই আলোকশিল্পী এবার থামতে চান। অবসর নিয়ে সুযোগ করে দিতে চান উত্তরসূরিদের। শ্রীধর দাস তাই আজ শুধু একটা নাম নয়, একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছেন। আর সেই ব্র্যান্ডের হাত ধরেই আজ চন্দননগরের আলোক সজ্জার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে।