চলে গেলেন ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’-র কালজয়ী কণ্ঠ, প্রয়াত এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম
চলে গেলেন বিখ্যাত গায়ক এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম। ভারতীয় সঙ্গীত জগতে তৈরি হল একটা শূন্যস্থান।
চেন্নাই : ভারতীয় সঙ্গীত জগতের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা সঙ্গীতশিল্পী এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম চলে গেলেন। রেখে গেলেন তাঁর ৪০ হাজারের ওপর গান।
করোনার শিকার হয়ে গত ৫ অগাস্ট চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম। সেখানেই তাঁর করোনার চিকিৎসা চলছিল। করোনামুক্ত হতে তাঁর একমাসের ওপর লেগে যায়।
সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম-এর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাননি। ফলে হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন তিনি।
গত বুধবার থেকে এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম-এর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার কমল হাসানও তাঁর খোঁজ নেন।
এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম সঙ্গীত জগতে পরিচিত ছিলেন বালু নামে। বুধবার থেকে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। অবশেষে চেন্নাইয়ের হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। শুক্রবার দুপুর ১টা ৪ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৭৪ বছরের এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম।
এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম-এর মৃত্যুর খবর হুহু করে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর মৃত্যুর খবরে গোটা দেশের সঙ্গীত জগত শোকস্তব্ধ। এমন এক কালজয়ী কণ্ঠ এদিন থেমে গেল একথাটা যেন মেনে নিতে পারছিলেননা কেউই।
করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম-এর প্রাণ কিন্তু কার্যত করোনাই কেড়ে নিল। গত ৫ অগাস্ট যখন এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম হাসপাতালে ভর্তি হন তখন কিন্তু তাঁর করোনা উপসর্গ ছিল মৃদু।
এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম নিজেই জানান তাঁকে চিকিৎসকেরা বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজেই স্থির করেছেন তিনি হাসপাতালে থাকবেন। তাই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তারপর এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম-এর চিকিৎসা চলছিল। মাঝে তিনি অনেকটা সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন। তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু তারপরই ফের তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। অবশেষে চলে গেলেন তিনি।
১৯৪৬ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম। ছোট বয়স থেকেই তিনি ছিলেন গানের ভক্ত। পড়াশোনাতেও ভাল ছিলেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। কিন্তু গানের প্রতি ছিল অমোঘ টান। তখনই বিভিন্ন গানের প্রতিযোগিতা থেকে পুরস্কার জিতছিলেন তিনি।
এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম-এর জীবন শুরু দক্ষিণী সিনেমায় গান দিয়ে। ১৯৬৬ সালে প্রথম সিনেমায় গান গান তিনি। ৮০-র দশকে এস পি পা রাখেন বলিউডে। তাঁর প্রথম হিন্দি সিনেমায় গান গাওয়া ‘এক দুজে কে লিয়ে’ সিনেমায়।
প্রথম সিনেমাতেই এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম-এর কণ্ঠ সকলের হৃদয় জয় করে নেয়। তারপর কালজয়ী সিনেমা ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’-তে তাঁর একের পর এক হিট গান এস পি-কে সারা দেশ জুড়ে বিপুল পরিচিতি এনে দেয়। সলমন খানের অনেক সিনেমায় গান গান তিনি।
এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম জীবনে ৬ বার সেরা গায়ক হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। ২০০১ সালে সম্মানিত হয়েছেন পদ্মশ্রী সম্মানে। ২০১১ সালে সম্মানিত হন পদ্মভূষণ সম্মানে।
এছাড়া জীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম। সবচেয়ে বেশি গান গাওয়ার জন্য গিনেস বুকেও নাম ওঠে তাঁর। ১৬টি ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। গেয়েছেন ৪০ হাজারের ওপর গান।
সেই অমর কণ্ঠের অধিকারী এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম এদিন চলে গেলেন। রেখে গেলেন তাঁর সুরেলা কণ্ঠের যাদু। যা চিরদিন বেঁচে থাকবে মানুষের মনে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা