প্রধানমন্ত্রীর মুখে আত্মনির্ভর ভারত, স্লোগানে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী
মুখ্যমন্ত্রী বলতে উঠলে জয় শ্রীরাম ধ্বনি। বক্তব্যই রাখলেন না মমতা। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি স্মরণে প্রধানমন্ত্রীর মুখে আত্মনির্ভর ভারত, সোনার বাংলা-র কথা।
কলকাতা : নেতাজি জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন আমন্ত্রিত। সেখানে তাঁকে বক্তব্য পেশের জন্য ডাকতেই শুরু হয় দর্শকাসনের একাংশ থেকে জয় শ্রীরাম ধ্বনি। মুখ্যমন্ত্রী তা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন। তিনি জানান, যে কোনও সরকারি অনুষ্ঠানের একটা নিজস্ব মর্যাদা থাকে। এটা রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। তাঁকে এখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আর আমন্ত্রণ জানিয়ে অপমান করা ঠিক নয়।
এরপর কলকাতায় এমন অনুষ্ঠান করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি দফতরকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি জানিয়ে দেন তাঁকে এভাবে অপমান করায় তিনি প্রতিবাদ জানিয়ে আর কিছু বলবেন না। যা নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক রং লাগল নেতাজি স্মরণ অনুষ্ঠানে।
শনিবার বিকেলে কলকাতায় এসে পৌঁছে প্রথমে নেতাজির বাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তাঁকে দ্রষ্টব্য সবকিছু ঘুরিয়ে দেখান সুগত বসু। তারপর সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী যান ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে একটি অনুষ্ঠানে। সেখানে নেতাজির মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ সহ কয়েকটি কাজ ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।
সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী হাজির হন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। ভিক্টোরিয়ার বিভিন্ন গ্যালারি ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।
ভিক্টোরিয়ার বিশাল চত্বরে তখন বহু মানুষের ঢল। ভিক্টোরিয়ার সামনের শ্বেতপাথরের প্রাঙ্গণে সুসজ্জিত স্টেজ। প্রধানমন্ত্রী এসে বসেন সামনে রাখা চেয়ারে। দুপাশে বসেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরু হয় অনুষ্ঠান।
নাচে, গানে নেতাজিকে স্মরণ করা হয়। এরপর মঞ্চে এসে বসেন প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী শুরুতে বক্তব্য পেশ করেন। তারপর মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে বলা হলেই ঘটে স্লোগান কাণ্ড। প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখেননি।
এরপর প্রধানমন্ত্রী আজাদ হিন্দ বাহিনীর এখনও জীবিত সেনানীদের সম্মান জানান। ২টি নেতাজি স্মরণে কয়েন ও ১টি ডাকটিকিটের উদ্বোধনও করেন তিনি।
বক্তব্য রাখতে উঠে নেতাজির জীবন ও সংগ্রামের কথা যেমন এদিন উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে, তেমনই নেতাজিকে সামনে রেখে উঠে এসেছে আত্মনির্ভর ভারতের কথা। উঠে এসেছে সোনার বাংলা গড়ার কথা। যেখানে অনেকে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী অন্য মোড়কে আদপে তাঁর দলীয় রাজনৈতিক স্লোগানকেই সামনে রাখলেন।
এদিন আরও একটি বিষয় সকলের নজর কেড়েছে। তা হল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ভাঙা বাংলায় নেতাজির অনেক বক্তব্য।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সন্ধে নামা ভিক্টোরিয়ায় নেতাজির জীবন নিয়ে একটি লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের প্রদর্শন হয়। অসামান্য কাজে ভিক্টোরিয়ার শ্বেতশুভ্র দেওয়ালে ফুটে ওঠে নেতাজির জীবনের নানা অধ্যায়ের কথা। অবশেষে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।