সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সংগঠিত আক্রমণ হানল আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের যৌথ বাহিনী। সিরিয়ার সেনা ছাউনি ও রাসায়নিক অস্ত্র মজুত রাখা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে এমন কিছু জায়গা চিহ্নিত করে সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করা হয়। রাসায়নিক পরীক্ষা কেন্দ্র, রাসায়নিক মজুত ভাণ্ডার সহ সেসব জায়গায় বেছে বেছে ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র সিরিয়ার রাজধানী শহর দামাস্কাস ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আছড়ে পড়েছে। তবে তাতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা বা কোনও প্রাণহানির খবর আছে কিনা তা পরিস্কার নয়। তবে বিমান থেকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে, তেমনই ভূমধ্যসাগরে দাঁড়ানো রণতরী থেকেও লক্ষ্য স্থির করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে।
অভিযোগ, গত ৭ এপ্রিল সিরিয়ার দৌমার ঘৌতা শহরে বিষাক্ত গ্যাসকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে সিরিয়া সেনা। সেই বিষাক্ত গ্যাস হানায় মৃত্যু হয় ৬০ জনের। অসুস্থ হন বহু মানুষ। সাধারণ মানুষ শিকার হন বিষাক্ত গ্যাসের। যদিও আসাদ সরকারের তরফে দাবি করা হয় বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু নিয়ে যা খবর হচ্ছে তা অতিরঞ্জিত। এমন কিছু সেখানে হয়নি।
সিরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই আসাদ সরকার বিরোধী বিদ্রোহীরা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। ঘৌতা শহর এমন একটা জায়গা যা দীর্ঘদিন বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে। বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটিও বটে। এই অবস্থায় বিদ্রোহীদের উপযুক্ত শিক্ষা দিতে আসাদ সরকারের সেনা নির্মমভাবে সেখানে বিষাক্ত গ্যাস হামলা চালায় বলে অভিযোগ করে সরব হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। যারমধ্যে আমেরিকাও ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তো আসাদকে ‘দৈত্য’ বলে ব্যাখ্যা করেন। তাঁকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন। তারপরই সিরিয়ার আসাদ সরকারকে যোগ্য জবাব দিতে আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু করে আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের যৌথ বাহিনী। অবশেষে হামলাও চালাল তারা। গত বছর আমেরিকা একবার একা হামলা চালালেও এবারই প্রথম ৩ দেশ একযোগে সিরিয়ায় হামলা চালাল।
এই অবস্থায় একটা বড় প্রশ্ন বিশ্বের সামনে খাড়া হয়েছে। সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সিরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা আগামী দিনে বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে না তো? সিরিয়ার ওপর এভাবে আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়া সহ অন্যান্য দেশ মেনে নেবে তো? নাকি আসাদের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্ব ভেঙে যাবে দুভাগে? যা নতুন করে বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতির জন্ম দেবে। আপাতত এসব প্রশ্নে বিশ্ববাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। যা হয়তো নেহাত অমূলকও নয়।