রামধনু হয়ে উঠে বাঁচল গ্রাম
নিজের বাসস্থানকে রক্ষা করতে, নিজের পরিবার ও প্রতিবেশিদের রক্ষা করতে যে রং তুলি নিয়েও লড়াই করা যায় এবং জেতা যায় তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন ৮৬ বছরের রামধনু দাদু।
যে বয়সে তাঁর অখণ্ড অবসর জীবন কাটানোর কথা সেখানে তিনি লড়াইয়ে নামেন। তবে ঢাল তরোয়াল নিয়ে নয়, নেহাতই রং তুলি হাতে। কিন্তু তাঁর ভাবনাকে আজও স্যালুট জানান এই গ্রামের মানুষ থেকে গোটা দেশের মানুষ।
চিন থেকে যাঁরা বিপ্লব ঘটিয়ে তাইওয়ানে আশ্রয় নেন তাঁদের ছোট ছোট জায়গায় থাকার জায়গা হয়। সেখানে তাঁরা ক্রমে তাঁদের বসতি তৈরি করেন।
কিন্তু পরবর্তীকালে সেসব অস্থায়ী গ্রাম ভেঙে সেখানে অট্টালিকা তৈরির জন্য নির্মাণ সংস্থাগুলিকে সেসব জমি দিয়ে দেওয়া হয়। তুলে দেওয়া হতে থাকে সেখানকার বাসিন্দাদের।
সেই সময় তাঁর গ্রামেরও এই দশা হতে চলেছে বলে বুঝতে পেরে হাতে রং তুলি তুলে নেন ৮৬ বছরের বৃদ্ধ আং ফু। গোটা গ্রামে তিনি সব ঘর নানা চিত্রে ভরিয়ে তুলতে থাকেন।
প্রথমে কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। কিন্তু তাঁকে বাধাও দেননি। বৃদ্ধ তাঁর খেয়ালে রাতদিন এক করে এঁকে যেতে থাকেন। তাইওয়ানের সেই গ্রাম ক্রমে রঙিন হয়ে উঠতে থাকে তাঁর হাতের ছোঁয়ায়।
প্রথমে নিজের বাড়ি দিয়ে শুরু করে তারপর আশপাশের বাড়ি, তারপর গ্রামের অন্য সব বাড়ি, রাস্তা, আশপাশের অন্য সব জায়গা, সবই রংবাহারি ছবিতে ভরিয়ে তুলতে থাকেন বৃদ্ধ।
এ যেন শুধু কৃষ্টি নয়, বেঁচে থাকার এক কঠিন লড়াই। প্রতিবাদ, লড়াই দিয়ে যে গ্রামকে ধ্বংস হওয়া থেকে ঠেকানো মুশকিল হত, সে গ্রামকে তিনি কিন্তু কেবল রং তুলি দিয়ে রক্ষা করেন।
কারণ তিনি গ্রামকে রঙিন করতে থাকলে সেকথা ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি। এমন এক আজব কাণ্ড দেখতে বহু মানুষ ভিড় জমাতে থাকেন গ্রামে। ক্রমে তা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়।
এটা দেখার পর প্রশাসন ওই গ্রামকে ভেঙে ফেলে অট্টালিকা তৈরির পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। বরং সেখানকার পর্যটন শিল্প নতুন আশা তৈরি করে। এভাবেই জন্ম নেয় পৃথিবীর একমাত্র রামধনু গ্রাম। যা এখন পৃথিবী বিখ্যাত।