মঙ্গলবার রাতের পর থেকে তাইওয়ানের চেনা ছন্দ একেবারে উধাও। চারদিকে বাড়ি, হোটেল, হাসপাতালের ভগ্নস্তূপ। বিরাট বহুতলকে দেখে পিসার হেলানো টাওয়ার বলে ভ্রম হয়। কান পাতলেই ভেসে আসছে প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানুষের হাহাকার। আপনজনের খোঁজে এদিক ওদিক পাগলের মত হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। খালি হাতেই ভেঙে পড়া বাড়ির ধুলোবালির মধ্যে তাঁরা খুঁজে চলেছেন আপনজনদের। হদিশ নেই প্রায় ১৫০ মানুষের। ২০০-র ঘর ছাড়িয়ে গেছে আহতের সংখ্যা। তাঁদের কাতরানিতে ভারী হয়ে উঠেছে তাইওয়ানের হুয়ালিন প্রদেশের আবহাওয়া। রিখটার স্কেলে ৬.৪ মাত্রার তীব্র ভূকম্পন কেড়ে নিয়েছে ৪ জনের প্রাণ। মৃতের সংখ্যা বেশ খানিকটাই বাড়তে পারে, এই আশঙ্কাই এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে নিখোঁজ ও আহতদের পরিবারকে। এ সবের মাঝেই দ্রুত গতিতে চলছে উদ্ধারকাজ। যাতে অন্তত এড়ানো যায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
মঙ্গলবার রাত তখন ১১টা বেজে ৫০। আচমকাই দুলে উঠতে শুরু করে গোটা তাইওয়ান। হুয়ালিন প্রদেশের মাটি থেকে ৯.৫ কিলোমিটার গভীরে তার উৎসস্থল। সেই কম্পনে সমগ্র তাইওয়ান দুলে উঠলেও সবথেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে ভূমিকম্পের উৎসভূমি। গভীর রাতে অনেকেই সেইসময় ঘুমনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আবার কেউ কেউ তখন ঘুমের দেশে পাড়িও জমিয়েছেন। তাই পায়ের তলার মাটি যে কাঁপছে তা বুঝে ওঠার সময়টুকু পাননি অনেকেই। যতক্ষণে প্রাণ বাঁচাতে তাঁরা বাইরে বেরিয়ে আসতেন, তার আগেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে শুরু করে বহুতলটি। চোখের নিমেষে আবাসনের ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে চাপা পড়ে যান বহু মানুষ। শুধু আবাসনই নয়, কম্পনের ধাক্কায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হোটেল, সেনা হাসপাতাল। চিড় ধরে যায় হুয়ালিনের রাস্তাঘাটেও। ভূমিকম্পের তাণ্ডব শেষে বিদ্যুৎসংযোগ ছিন্ন হয়ে যায় হুয়ালিনের ২ হাজার বাড়ির। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় জলের সংযোগও। প্রকৃতির তাণ্ডব থামতেই দ্রুত উদ্ধারকার্যে নেমে পড়ে তাইওয়ান প্রশাসন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আগে উদ্ধার করতে হবে নিখোঁজ ও ভগ্নস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের। কিন্তু মূল ভূকম্পনের পরে আরও ১৫ বার কেঁপে কেঁপে উঠেছে তাইওয়ানের মাটি। সেই আফটার শকের আতঙ্ক কাটিয়ে উদ্ধার করতে হবে নিজের দেশ ও বিদেশের নিখোঁজ নাগরিকদের। এটাই এখন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে মস্ত চ্যালেঞ্জ।