ভাল্লুকের ‘টেডি’ হয়ে ওঠা, বিশ্বজুড়ে তাকে নিয়ে উন্মাদনার পিছনে আছে এক ইতিহাস। সেই ইতিহাস জানতে পিছিয়ে যেতে হবে ১১৬ বছর।
তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন থিওডর রুজভেল্ট। কাছের লোকজন দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রেসিডেন্টকে ডাকতেন ‘টেডি’ নামে। টেডির ‘বেয়ার’ বা ভালুকের প্রতি ভালোবাসার এই গল্প ১৯০২ সালের নভেম্বর মাসের। সেবার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ওরফে ‘টেডি’ যান মিসিসিপি এলাকায় শিকার করতে। তখনকার দিনে পশু শিকারে আজকালকার মত বিধিনিষেধ ছিলনা। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বেশ কয়েকজন প্রশাসনের মাথাও ছিলেন সেই শিকার পর্বে। ৩ দিন ধরে চলল শিকার। তৃতীয় দিনের শেষে দেখা গেল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শিকারে আসা অন্য সকলেই একটি করে ভালুক শিকারে সমর্থ হলেও রুজভেল্ট পারেননি। সেকি কথা! স্বয়ং প্রেসিডেন্ট কী তবে এ যাত্রায় ভালুক শিকারে অসমর্থ হবেন? তাই হয় নাকি? তাই শিকারে আসা বাঘা বাঘা কয়েকজন শিকারি মিসিসিপির জঙ্গল থেকে ধরে আনলেন ১ ভালুককে। ভালুককে তাঁরা নিয়ে হাজির হলেন প্রেসিডেন্টের তাঁবুর সামনে। একটা উইলো গাছের সাথে শক্ত করে বাঁধা হল ভালুকটিকে। তারপর প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের হাতে বন্দুক তুলে দেওয়া হয় ভালুকটাকে মারার জন্য। কিন্তু সকলকে চমকে দিয়ে হঠাৎ বন্দুক হাত থেকে নামিয়ে রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভালুকটাকে তিনি মারতে পারবেননা। সাফ সেকথা জানিয়ে দেন শিবিরে উপস্থিত সকলকে।
যাঁর অঙ্গুলিহেলনে কিনা বদলে যেতে পারে আমেরিকার মানচিত্র, সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রেসিডেন্ট কিনা একটা ভালুককে গুলি করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন? জংলি ‘বেয়ার’-এর উপর প্রতাপশালী প্রেসিডেন্টের সেই করুণা উদয়ের কথা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের গতিতে রটে যায় চারদিকে। সেই খবর এসে পৌঁছয় আমেরিকার এক কার্টুনিস্টের কানে। ক্লিফোর্ড বেরিম্যান নামের ওই কার্টুন শিল্পী আবার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে কার্টুন আঁকায় সিদ্ধহস্ত। বেরিম্যান রুজভেল্ট ও ভালুকের সেই কাহিনির কথা মাথায় রেখে এঁকে ফেললেন এক মজার ছবি। ‘ড্রইং দ্য লাইন ইন মিসিসিপি’ নামের সেই ছবিতে দুনিয়া দেখল এক লোমশ ভাল্লুককে। সেই ভাল্লুকের শারীরিক গঠনে যদিও আজকের ‘টেডি বেয়ার’-এর লালিত্য ছিলনা। তাই পরের ছবিতেই ভাল্লুকের জান্তব চেহারা সংশোধন করে আঁকা হয় এক মিষ্টি তুলতুলে ভাল্লুকের ছবি। ভাল্লুকের সেই রূপ অচিরেই জয় করে নেয় গোটা দুনিয়ার শিশু মন। আর শিশুদের সেই পছন্দের কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন পুতুল নির্মাণকারী সংস্থা বাজারে নিয়ে আসে ‘টেডি বেয়ার’-কে।
‘টেডি’-কে নিয়ে সকলের উন্মাদনায় ক্যালেন্ডারে সংযোজিত হয় এক নতুন দিবস। ৯ সেপ্টেম্বরকে চিহ্নিত করা হয় ‘বিশ্ব টেডি বেয়ার দিবস’ হিসেবে। দিনটি পৃথিবীর বিভিন্নপ্রান্তের বিভিন্ন সম্পর্কের মানুষ ‘সেলিব্রেট’ করে থাকেন। আর শুধু ভালোবাসার মানুষগুলোর জন্য আলাদা করে তৈরি হল ‘টেডি বেয়ার’-ময় দিন। ১০ ফেব্রুয়ারি সেই দিন, যেদিন উপহারের দোকানগুলিতে প্রেমিক প্রেমিকার পথ চেয়ে অপেক্ষা করে থাকে সুন্দর টেডি বেয়ারের দল।