শহরের বুকে অজানা মহাশ্মশান, সেখানেই প্রতিষ্ঠিত মা সিদ্ধেশ্বরী
সন্ন্যাসী আর ফিরে এলেননা। মহাশ্মশানেই বাস করতেন নির্লিপ্ত সেই তন্ত্রসাধক। পঞ্চমুণ্ডির আসন বেদীতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি।
গ্রামের নাম সুতানুটি। চারিদিকে গভীর ঘন জঙ্গল। জন কোলাহল নেই এতটুকুও। মহাশ্মশানেই মধ্যে ছোট্ট একটি হোগলাপাতার ঘর। এর সামনে দিয়েই বয়ে গিয়েছে একটি খাল। গঙ্গার চরণ ছুঁয়েই এসেছে এ খাল। গঙ্গার একটি অংশ এই খাল।
গঙ্গা তখন বয়ে যেত আজকের সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-এর রাস্তার উপর দিয়ে। এই মহাশ্মশানেই বাস করতেন নির্লিপ্ত তন্ত্রসাধক ব্রহ্মচারী উদয়নারায়ণ। পঞ্চমুণ্ডির আসন বেদীতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেবী সিদ্ধেশ্বরীর মৃন্ময়ী মূর্তি। সন তারিখের হিসাব ভেসে গিয়েছে মহাকালের স্রোতে। শোনা যায় (কথিত আছে) ব্রহ্মচারী উদয়নারায়ণের একমাত্র শিষ্য ছিলেন পুত্রহীন রামশংকর হালদার। সংসারে থেকে কোনও কিছুতেই তাঁর আসক্তি নেই। পড়ে থাকতেন গুরুর কাছে শ্মশানে। একদিন ব্রহ্মচারী রামশংকরকে বললেন, পরিব্রাজনে যাবেন তিনি। না ফেরা পর্যন্ত যেন সেবা পুজোয় মায়ের কোনও ত্রুটি না ঘটে। সন্ন্যাসী ব্রহ্মচারী বেরলেন। আর ফিরে এলেন না তিনি। তন্ত্র সাধকের বংশের কোনও পরিচয় জানা যায়নি।
আজকের ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের জমি ছিল তখন রামশংকরের। তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে তাঁর জমি দিয়ে স্বত্ব নিলেন এই মহাশ্মশানের। কারণ জমির মালিক ছিল কোম্পানি।
মহাশ্মশানের কোনও চিহ্ন যদিও আজ নেই, নেই সেই বয়ে যাওয়া খাল। কালের ব্যবধানে অতীতের সুতানুটির মহাশ্মশান ক্ষেত্রটিতেই আজকের ঠনঠনে কালীমন্দির। হোগলাপাতার ঘর রূপান্তরিত হয়েছে ইমারতে। প্রসিদ্ধি লাভ করেছে দেবী সিদ্ধেশ্বরী নামে।
১৭০৩ সাল তথা ১১১০ বঙ্গাব্দের কথা। নবাব আলিবর্দির আমল। শোনা যায় হাওড়া জেলার অন্তর্গত বালি-ব্যারাকপুর গ্রামের আড়পুলির ঘোষ বংশের ইংরেজ বিনিয়ান ধনবান রামশংকর ঘোষই বর্তমান দেবী মন্দির এবং পুষ্পেশ্বর মহাদেব মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। ১৮০৬ সালে আটচালা শিবমন্দিরটি নির্মাণ করেন রামশংকর।
দক্ষিণমুখী এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়ে অন্য মত আছে। শ্রীরামকৃষ্ণের পার্ষদ স্বামী সুবোধান্দের প্রপিতামহ ছিলেন শংকর ঘোষ। অনেকের মতে, তিনিই এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা।
সালঙ্কারা দেবী সুবসনা। বিগ্রহের বাঁ দিকেই মাথা রেখে শুয়ে আছেন সদাশিব। মাঝারি আকারের বিগ্রহ। চতুর্ভুজা। উজ্জ্বল মুখমণ্ডল। প্রতিবছর মৃন্ময়ী মূর্তির অঙ্গরাগ করা হয় দীপান্বিতা কালীপূজার আগে। কথিত আছে, সাধক রামশংকরের সময়কালে প্রতিষ্ঠিত মাটির বিগ্রহটিই পুজো পেয়ে আসছে আজও। ঠনঠনে সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা, প্রতিষ্ঠাকাল, বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা এবং জমি ইত্যাদি নিয়ে অতীতে দ্বিমত ছিল, আজও আছে।
ঠনঠনে তথা ঠনঠনিয়া, বিধান সরণি, ঠনঠনিয়া সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির সংলগ্ন পুষ্পেশ্বর শিবের আটচালা মন্দিরে উৎকীর্ণ লিপি –
‘‘শ্রীমন্দিরে সমস্থাপিত শ্রীমৎ পুষ্পেশ্বর শিবঃ
মনোহরস্রিয়াদৌসা। শকাব্দে হি দ্বি দ্বিপর্ককে
১২৭৮ সন ১২১৩। তারিখ ১ বৈশাখ-’’।