কেউ বলছেন, ‘সুপার ফ্লপ শো’। কারোর দাবি, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির ইউনিয়ন বাজেট রীতিমত ‘গোলমেলে’। জনমোহিনী তো দূর, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে নেই কোনও নতুনত্ব। যতই প্রধানমন্ত্রী বাজেটের প্রশংসায় লোকসভার টেবিল চাপড়ান না কেন, সেই বাজেট আসলে ‘না ঘর কা, না ঘাট কা’। এই বাজেট আসলে জনবিরোধী বাজেট। এই ভাষাতেই এদিন বিজেপি সরকারের বাজেটকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা, পরিকাঠামো বা পরিকল্পনা, দুইয়েই তৃণমূল সরকার মোদীর সরকারের থেকে অনেক এগিয়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটের সমালোচনা করতে গিয়ে এদিন এমনই দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৮-র ইউনিয়ন বাজেটে নেই দেশের সংখ্যালঘু বা পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য বিশেষ কোনও ঘোষণা। নেই জিএসটি, কর্মসংস্থান নিয়ে বড় কোনও চমক। এমনকি যার দিকে অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন কৃষকরা, তাঁদের জন্য বাজেটে রাখা হয়নি বিশেষ কোনও প্রকল্প। তাই এই বাজেট নিয়ে তিনি লজ্জিত বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সুর শোনা গেল তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীর গলাতেও। মধ্যবিত্ত ও প্রবীণ নাগরিকদের কথা কি আদৌ ভাবা হয়েছে বাজেটে? প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বাজেট নিয়ে কটাক্ষে সবথেকে নজর কেড়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। ৪ বছর কেটে গেছে। তারপরেও নেই কৃষকদের জন্য ন্যায্যমূল্যের ব্যবস্থা, নেই যুব সম্প্রদায়ের জন্য কর্মসংস্থান। এই অভিযোগে সুর চড়িয়েছেন রাহুল। লোকসভা ভোটের আর একবছর বাকি। বিজেপির পরবর্তী ১ বছরের কর্মকাণ্ডের দিকে নজর থাকবে বলেও মোদীকে হাল্কা খোঁচা দিতে ছাড়েননি রাহুল।
অন্যদিকে বর্তমান অর্থমন্ত্রীর বাজেটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। অরুণ জেটলির বাজেটকে বড় ‘হার’ বলে মনে করছেন চিদম্বরম। সেই হারের মাশুল গোটা দেশবাসীকে দিতে হবে বলে খেদ প্রকাশ করেছেন তিনি। এদিকে বাজেটে বিহার-এর সাথে বঞ্চনার দাবিতে মুখ খুলেছে রাষ্ট্রীয় জনতা দল। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বাজেট নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করার দাবিতে মুখর হয়ে উঠেছেন নীতীশ বিরোধীরা। যদিও অর্থমন্ত্রীর বাজেট খুব একটা ভালো করে শোনেননি বলে আপাতত পাশ কাটিয়ে গেছেন বিজেপির হাত ধরা নীতীশ।
বাজেট নিয়ে আক্ষেপের সুর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেও। রাজধানীর জন্য বাজেটে নেই বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধা। দিল্লির সাথে কেন্দ্র বৈমাত্রেয় আচরণ করছে বলে মনে করছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বাজেটের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়েছেন মায়াবতীও। ভোটের সময় মোদীর বলা ‘আচ্ছে দিন’-এর ছাপ বাজেটে আছে কি? প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধে কৈফিয়ত চেয়েছেন বহুজন সমাজ পার্টি সুপ্রিমো। অর্থমন্ত্রীর বাজেটে হতাশ হয়েছেন সমাজবাদী পার্টিও। গরিব সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী বা মহিলা সবার জন্যই ইউনিয়ন বাজেট ‘হতাশাজনক’, এমনটাই দাবি অখিলেশ যাদবের। সব মিলিয়ে বিজেপি বাজেটকে যতই ক্লিনচিট দিক, লোকসভা নির্বাচনের আগে কোথাও যেন ‘একঘরে’ তকমা লাগল অর্থমন্ত্রীর বহুপ্রতীক্ষিত ‘জনমুখী’ বাজেটের গায়ে।