আগুপিছু না ভেবেই বন্ধু ইজরায়েলের জন্য জেরুজালেমকে রাতারাতি রাজধানী ঘোষণা করাটা যে নেহাতই ‘সেমসাইড’ হয়ে গিয়েছে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বোলবোলা বজায় রাখতে ইজরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা মার্কিন মুলুকের পুরনো রীতি। মাঝে ওবামার আমলে তা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেলেও সেই পরিস্থিতি দ্রুত বদলে ফেলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নেতানিয়াহু-র রাষ্ট্রকে হুট করে জেরুজালেমকে রাজধানী হিসাবে পাইয়ে দেওয়ার এক চরম ঘোষণাও করে দেন। কিন্তু ঘোষণার পরক্ষণেই রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের রোষানলে পড়েন। সেই রাষ্ট্রসংঘ যেখানে অলিখিত মার্কিন আধিপত্য নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। দ্রুত নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকেন রাষ্ট্রসংঘের স্বল্পভাষী মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে প্রবলভাবে সমালোচিত হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই একতরফা ঘোষণা।
এবার রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভাতেও মুখ পুড়ল মার্কিন মুলুকের। সৌজন্যে দেশের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। জেরুজালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী ঘোষণার মার্কিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোটাভুটিতে বন্ধুরাষ্ট্রদেরও পাশে পেলেন না ট্রাম্প। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট পড়ে ভারত সহ ১২৭টি দেশের। পক্ষে ছিল মাত্র ৯টি দেশের ভোট। ৩৫টি দেশ ভোটদানে অংশগ্রহণ করেনি।
তবে বিষয়টি যে এখানেই শেষ হয়ে গেল তা মানতে নারাজ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞেরা। কারণটা অবশ্যই ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি ভোটাভুটির আগের দিন কার্যত হুঁশিয়ারি ছুঁড়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে যে সব দেশ তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবে তাদের আগামী দিনে ফল ভুগতে হবে। মার্কিন মুলুকের কাছ থেকে আগামী দিনে কোনও আর্থিক সাহায্যের কথা তারা ভুলে গেলেই ভাল। তা সত্ত্বেও এদিন যেভাবে হৈহৈ করে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট পড়ল তাতে একটা ঠান্ডা লড়াই যে শুরু হয়ে গেল তা মেনে নিচ্ছেন অনেকেই। বিষয়টা যে ট্রাম্প ভাল চোখে নেবেন না তাও মানছেন তাঁরা। ফলে বিশ্ব রাজনীতির কূটনৈতিক মারপ্যাঁচ আগামী দিনে যে বড় একটা সরলরেখায় এগোবে না তা বলাই বাহুল্য।