
২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সাড়া জাগানো ছবি রোনাল্ড এমরিচ পরিচালিত ‘দ্যা ডে আফটার টুমরো’-র শেষদিকের দৃশ্যের কথা মনে আছে? যেখানে একটা আস্ত শহর সুনামির কবলে পড়ে। তারপরেও দুর্ভোগ কাটেনি শহরবাসীর। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে শহরে ঢুকে পড়া সমুদ্রের জল পরিণত হয় তুষার কঠিন বরফে। ১.৮ লক্ষ বছরের পুরনো হিম যুগের পর আচমকাই শহরের বুকে থাবা গেড়ে বসে নয়া ‘তুষার যুগ’।
তুষার যুগের সেই আতঙ্কই এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূলের বাসিন্দাদের। একদিকে যখন ৯-১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জবুথবু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, সেখানে মাইনাসের খপ্পরে পড়ে কাঁপছেন আমেরিকাবাসী। আবহাওয়া দফতর অবশ্য আগেই এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। তাদের সেই আশঙ্কাকে সত্যি করে ফ্লোরিডা, ফিলাডেলফিয়া, জর্জিয়া, ভার্জিনিয়াসহ একাধিক অঞ্চলে আছড়ে পড়ে ‘বম্ব সাইক্লোন’। গত বুধবারের তুষারপাত থেকেই মিলেছিল অশনি সংকেতের আভাস। তাই আগে ভাগেই স্কুল কলেজে বেজে গিয়েছিল ছুটির ঘণ্টা। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় হিমেল হাওয়াসহ তুষার ঝড়। বরফের চাদরে ঢেকে যায় ফ্লোরিডা, ফিলাডেলফিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। গত ৩০ বছরে এমন বরফ পড়া দেখেনি ফ্লোরিডা। রাস্তাঘাটে জমাটবাঁধা বরফের ঘনত্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে গাড়ি চালানো দায় হয়ে পড়ে। প্রশাসনের তরফ থেকে সাবধান করে দেওয়া হয় যে বাইরে বেশ কিছুক্ষণ থাকলে শীতের মরণ কামড় অবধারিত। বৃহস্পতিবারই তাপমাত্রা নেমে আসে মাইনাস ২০ ডিগ্রিরও নিচে। এরমধ্যে তুষার ঝড়ের কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১৭ জন। তুষারপাতে চারদিক ঝাপসা হয়ে যাওয়ায় বাতিল হয়েছে বহু বিমান। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় অন্ধকারে ডুবে ৮০ হাজারের মত বাড়ি।
বৃহস্পতিবার থেকে ধীরে ধীরে তুষার ঝড় তার গতিপথ পাল্টালেও শনিবার পর্যন্ত অবস্থার উন্নতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। এমনটাই মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। আগামীদিনে তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের। শনিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে শীতলতম দিন হতে পারে বলে মনে করছে আবহাওয়া দফতর। তবে বম্ব সাইক্লোন-এর এই দাপুটে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে তারা প্রস্তুত বলে আশ্বাস দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তবে মানুষজন চাইছেন কেটে যাক এই ভয়ংকর দুর্যোগ। একটু উষ্ণতার জন্য এখন তাঁদের হাপিত্যেশ অপেক্ষা।