Kolkata

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অনিয়মের অভিযোগ, ক্ষুব্ধ কৃতীরা

মুখ্যমন্ত্রী ফিরতেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে চূড়ান্ত অব্যবস্থায় ক্ষুব্ধ কৃতী ছাত্রছাত্রীরা। জীবনে এই দিনটা তো একবারই আসে। সেটাও এমন অম্লমধুর হয়ে থাকল।

নিজের বক্তব্য বাংলাতেই রাখবেন। এই ঘোষণা দিয়েই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি। আর শিক্ষাঙ্গনকে অসহিষ্ণুতা মুক্ত করার প্রস্তাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দেন শিক্ষামন্দিরে কোনওরকমের অন্যায় আপোষ করতে রাজি নন তিনি। সম্প্রতি কলকাতার জয়পুরিয়া থেকে চারুচন্দ্র কলেজসহ জেলার বিভিন্ন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা তৈরির ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। গত বৃহস্পতিবার সাম্মানিক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত মুখ্যমন্ত্রীর আবেগতাড়িত ভাষণ থেকে তা স্পষ্ট। একসময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন তিনি। তাঁর সময়ে ছাত্রজীবনের প্রতি মুহুর্তের সংগ্ৰামের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অভিভাবকসুলভ ভঙ্গিতে আগামীদিনের মহীরুহদের সহিষ্ণুতার পাঠ দিতে শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে।

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় ভরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো এবং ভবিষ্যতে আরও ভাল কাজের জন্য ১০০ কোটি টাকা অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর কণ্ঠে শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর অনুবর্তী সুর।


মঞ্চ এক, উপলক্ষও এক। শিক্ষা হোক বা কৃষ্টি, উভয় ক্ষেত্রে সফল কৃতীদের সম্বর্ধনা প্রদান। বৃহস্পতিবার কলকাতার নজরুল মঞ্চ সাক্ষী থাকল তারই গর্বোজ্জ্বল মুহুর্তের। দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-র সমাবর্তন যজ্ঞে সম্মানিত হলেন শিল্প-সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে নিজ নিজ বিষয়ে কৃতী ছাত্রছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকেই অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে শুরু হয়ে গিয়েছিল তোড়জোড়। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ করে ফেলা হয় রবীন্দ্র সরোবর চত্বর। বেলা গড়তেই নজরুল মঞ্চের ভিতরে দেখা যায় তিল ধারণের স্থান নেই। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের মূল অনুষ্ঠানের ‘লাইভ টেলিকাস্ট’ দেখাতে মঞ্চের বাইরে ব্যবস্থা করা হয় ‘জায়ান্ট স্ক্রিন’-এর। পরে অবশ্য তাঁদের ডেকে আনা হয় মঞ্চের ভিতরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি, এমফিল, এলএলএম ডিগ্ৰির অধিকারীরা সম্মানিত হওয়ার আনন্দে তখন রীতিমত টগবগিয়ে ফুটছেন।

বৃহস্পতিবারই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মানিক ডি লিট দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় পরিয়ে দেন উত্তরীয়। হাতে তুলে দেন ডিলিটের শংসাপত্র। এরপর মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয় শিক্ষা, শিল্পকলা, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রযুক্তি, আইনশৃঙ্খলারক্ষাসহ একাধিক ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন এমন বিদ্বজ্জনদের। সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদারসহ ১৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। আগামীদিনের নাগরিক গড়ে তোলার কাণ্ডারি ১০ জন কৃতী শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সম্বর্ধনা জানান মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি সেরার সেরা ছাত্রছাত্রীরা পুরস্কার গ্ৰহণ করেন মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে।


University of Calcutta

এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, সব ভালোর মধ্যে কোথাও যেন খামতি থেকে গেল ২০১৮-র সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। মঞ্চ ছেড়ে রাজনৈতিক ভিভিআইপিদের প্রস্থান মাত্রই নজরুল মঞ্চে সৃষ্টি হয় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর হাতে শংসাপত্র তুলে দিতে গিয়ে কার্যত ল্যাজে-গোবরে হতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের। এখানেই ক্ষোভ জমাট বেঁধেছে ছাত্রছাত্রীদের মনে। সমাবর্তন কি শুধুই মুখ্যমন্ত্রীকে ডি লিট সম্মান প্রদান করতে আয়োজন করা হয়েছিল? যথাযথ নিয়মে নিজেদের সম্মান প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত মনঃক্ষুণ্ণ ছাত্রছাত্রীদের কেউ কেউ এই প্রশ্নও তুলে দিয়েছেন।

ক্ষোভের মেঘ জমতে দেখা গেছে অভিভাবকদের মধ্যেও। সারাদিনের অনুষ্ঠান। অথচ উপস্থিত ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের সঙ্গে আসা পরিচিতদের আপ্যায়নের মধ্যেও দেখা গেছে একগুচ্ছ খামতি। এমনকি ভিতরে যেসব ব্যানার দেওয়া হয়েছিল সেখানেও বানান ভুল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফিরতেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে চূড়ান্ত অব্যবস্থায় ক্ষুব্ধ কৃতী ছাত্রছাত্রীরা। জীবনে এই দিনটা তো একবারই আসে। সেটাও এমন অম্লমধুর হয়ে থাকল। এটা তাঁরা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button