Lifestyle

কে তুমি ভ্যালেন্টাইন

প্রেমের সেই কণ্টকময় পথ থেকে কাঁটা সরিয়ে তাকে গোলাপের পাপড়িতে সাজিয়ে তুলতে কম চেষ্টা করেননি একজন মানুষ। সেই চেষ্টার মাশুল তাঁকে দিতে হয়েছিল নিজের জীবন দিয়ে।

মিডিয়ার দৌলতে সারা বিশ্বের আবালবৃদ্ধবনিতা এখন জানে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’-র মাহাত্ম্যকথা। তাই এদিন কলেজ বা কোচিংয়ের ‘এক্সট্রা ক্লাস’-এর গল্প ফেঁদে মা বাবার চোখে ধুলো দিয়ে মনের মানুষের হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো আজ আর মুখের কথা নয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি বন্ধু বা বান্ধবীর বাড়ি আড্ডা দিতে যাচ্ছি বা নোট নিতে যাচ্ছি বললে সে কথায় আজ আর বিশ্বাস করেননা প্রেমের পথে ‘গব্বর’ হয়ে দাঁড়ানো অভিভাবকরা।

সেই কোনকালে রাধা কতই না কৃচ্ছ্রসাধন করে সকলের চোখে ধুলো দিয়ে দুর্গম পথ পার করে দেখা করতে যেতেন শ্রীকৃষ্ণের সাথে। আর আজকের যুগের ছেলেমেয়ে হয়েও কিনা ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’-র দিন দেখা করার উপায় নেই দুটি প্রেমী হৃদয়ের! কোনওভাবে ‘ম্যানেজ’ করে বাইরে বার হওয়া গেলেও ঘড়ির দিকে রাখতে হয় সতর্ক নজর। ঠিক সময়ে বাড়িতে ঢুকতে হবে। একবিংশ শতকে যদি প্রেমের পথে এত চড়াই উৎরাই থাকে, তাহলে আজ থেকে ১০০ বা ১০০০ হাজার বছর আগে না জানি কি পরীক্ষাই দিতে হত প্রেমিক প্রেমিকাদের!


প্রেমের সেই কণ্টকময় পথ থেকে কাঁটা সরিয়ে তাকে গোলাপের পাপড়িতে সাজিয়ে তুলতে কম চেষ্টা করেননি অবশ্য একজন মানুষ। সেই চেষ্টার মাশুল তাঁকে দিতে হয়েছিল নিজের জীবন দিয়ে। মিলনে উন্মুখ দুটি হৃদয়কে মেলাতে যিনি রাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেছিলেন, তাঁকে গোটা দুনিয়া এখন একডাকে চেনে।


Valentines Day
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন

রোমের ক্যাথলিক চার্চের যাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। দুটি প্রেমী হৃদয়কে এক করার অপরাধে যাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। খ্রিস্টীয় তৃতীয় দশকে ক্ষমতায় বসে দ্বিতীয় ক্লডিয়াস জারি করেন এক অদ্ভুত নিয়ম। তাঁর মনে হয়েছিল, যে পুরুষের জীবনে প্রেম বা নারীর উপস্থিতি নেই, তিনিই হয়ে উঠতে পারেন দক্ষ সেনা। একাকী পুরুষদের সংগঠনেই দেশের শক্তিশালী সেনানী গড়ে তোলা যাবে বলে বিশ্বাস করতেন সম্রাট। তাঁর সেই বিশ্বাসকে বাস্তবায়িত করতে আচমকাই রোমের পুরুষদের জীবনের নেমে আসে স্বেচ্ছাচারী ফরমানের গহন কালো ছায়া। সেই ফরমানের ভয়ে বিয়ে করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন রোমান পুরুষরা।

Rose

দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের দাপটের ভয়ে ক্রমশ মরুভূমিতে পরিণত হয় রোমের প্রেমিক প্রেমিকার হৃদয়। সম্রাটের এমন অন্যায় অনাচার অবশ্য মন থেকে মেনে নিতে পারেননি সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। সরাসরি তিনি সম্রাটের খামখেয়ালি মর্জির বিরোধিতা না করলেও অন্য ফন্দি আঁটেন। গোপন বিবাহে ইচ্ছুক পুরুষ ও নারীদের বিয়ে করতে সাহায্য করতে থাকেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। সেই কথা গুপ্তচর গিয়ে তুলল বদমেজাজি দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের কানে। ব্যাস! রাজার আদেশ অমান্য করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল মানবতা ও প্রেমের পূজারি সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে।

Love

ভালোবাসা অন্ধ। তা যেমন কেড়ে নিতে পারে অন্যের জীবন। আবার ভালোবাসার খাতিরে প্রেমিক হৃদয় অনায়াসে আত্মোৎসর্গ করতে পারে তার অমূল্য প্রাণ। প্রেমের এমনই একটি বেদনাদায়ক কাহিনি লোকমুখে প্রচলিত শাশ্বত নগরী রোমের অলিতে গলিতে। রোমান সম্রাটদের রাজত্বকালে বীভৎস ও অমানুষিকভাবে অত্যাচার করা হত কারাগারে বন্দি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের উপর। সেই বন্দিদের মধ্যে একজন নাকি একবার জেলারের মেয়ের প্রেমে একেবারে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। জেলারের মেয়ে কারাগারে বন্দি অপরাধীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি হৃদয়হরণ করে নেন এক বন্দির। জেলারের মেয়েকে তো আর অনায়াসে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া যায় না। তাই স্বপ্নচারিণীর উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লেখেন ওই বন্দি। প্রেয়সীকে মনের কথা বলার পর ‘তোমার ভ্যালেন্টাইন’ নামে চিঠির অন্তিম অংশে সই করেন ওই বন্দি। মরণের ওপারে গিয়েও সেই ‘ভ্যালেন্টাইন গ্রিটিংস’-এর হাত ধরে অমরত্ব লাভ করে এক ব্যর্থ প্রেম গাথা।

Valentines Day

একদিকে প্রেমের পথকে সুসজ্জিত করতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জীবন উৎসর্গ। অন্যদিকে মনের মানুষের পথ চেয়ে অন্ধকার কুঠুরিতে মাত্রাছাড়া নির্যাতন সহ্য করতে করতে এক বন্দি হৃদয়ের অপমৃত্যু। এই দুই করুণ আলেখ্যর স্মৃতিতেই প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি এক হয়ে জ্বলতে থাকে প্রেমী হৃদয়ের অক্ষয় পিলসুজ।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button