Foodie

প্রতিদিন রাত ৩টেয় শুরু হয় জিভে জল আনা ভূরিভোজের তোড়জোড়

তখন মাঝরাত। যখন সকলে ঘুমে কাদা ঠিক তখন শুরু হয় এই রান্না। ৩৬ ব্যঞ্জনের এই ভূরিভোজের বন্দোবস্ত ওই রাত থেকেই শুরু করতে হয়।

তখন ভারতের কাশ্মীর হয়ে ছিল সিল্ক রুট। রেশমের ব্যাপারীরা এখান দিয়ে যাতায়াত করতেন বাণিজ্য করতে। রাশিয়া ও পারস্য থেকে এঁরা আসতেন। ফলে এঁদের হাত ধরে সে সময় কাশ্মীরে প্রবেশ করে রাশিয়া ও পারস্যের বিভিন্ন খাবার।

এরপর ১৩৯৮ সালে উজবেকিস্তানের সমরখন্দ থেকে ভারতে লুঠতরাজ করতে হাজির হন তৈমুর লং। তিনি সঙ্গে আনেন ওয়াজা বা রাঁধুনিকে। সেই সময় কাশ্মীরের রসনায় মিশে যায় এই ওয়াজওয়ান ব্যঞ্জন। ভারতে প্রবেশ করে ৩৬ পদের ওয়াজওয়ান।


এখন এই জিভে জল আনা পদের বাহার কাশ্মীরের বিশেষ ব্যঞ্জন হিসাবেই পরিচিতি পেয়েছে। তকমা পেয়েছে হিন্দুস্তানি খাবার হিসাবেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের সেরা থালিতে পরিণত হয়েছে এটি। উপত্যকার গর্বে পরিণত হয়েছে ওয়াজওয়ান নামে এই থালি।

থালা বাটি ভরা মন ভরানো সুবাস আর স্বাদের এই রান্না করা কিন্তু মুখের কথা নয়। অনেক তার নিয়মকানুন। রাত ৩টে থেকে এই রান্না শুরু করতে হয়। তবেই সঠিক সময়ে শেষ করা যাবে এই রান্না।


এই রান্নায় কেবলমাত্র ভেড়ার মাংস ব্যবহার হয়। সব রান্নাই হয় হয় ভেড়ার মাংসে। সে ভাড়ার মাংস আবার ফ্রিজ থেকে বার করে কেটে রান্না করলে হবে না। ভেড়াটিকে জবাই করা হয় রান্নার ঠিক ১ ঘণ্টা আগে। যাতে তার স্বাদে কোনও খামতি না থাকে।

Food
কাশ্মীরি খাবার, ছবি – সৌজন্যে – উইকিমিডিয়া কমনস

মাংসটিকে পিটিয়ে পিটিয়ে একটা জায়গায় আনা হয়। যাতে তার স্নায়ুগুলো ছিঁড়ে মিশে যায়। তবেই তার স্বাদ ঠিকঠাক বার হবে। বিভিন্ন পদ রাঁধার জন্য ভেড়ার দেহের বিভিন্ন অংশকে কাজে লাগানো হয়।

ভারতীয় ব্যঞ্জনের তালিকায় সবচেয়ে ওপরে জায়গা করে নিয়েছে ওয়াজওয়ান। এই ওয়াজওয়ানে যে ভেড়ার মাংস ব্যবহার হয় তা পেটাই করা হয় আখরোটের কাঠ দিয়ে পাথরের ওপর। তাতে এর স্বাদ পুরোমাত্রায় বজায় থাকে।

ভারতে যেকোনও রান্নার স্বাদ তৈরি হয় তা উত্তাপে রান্না হওয়ার পর থেকে। কিন্তু ওয়াজওয়ানের পদগুলির ক্ষেত্রে রান্নার স্বাদ রান্নার আগেই তৈরি হতে শুরু করে।

কারণ খাবার যখন রান্নার জন্য তৈরি করা হয় তখন তা অসমোসিস নামে এক ধরনের সুস্বাদু ও সুগন্ধি তরলে ভিজিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া এক ধরনের সুগন্ধযুক্ত ধোঁয়া তৈরি করা হয়। তারপর সেই ধোঁয়ার মধ্যে রাখা হয় রান্না না হওয়া পদগুলিকে।

এতে রান্নার পর তাতে এক অন্য স্বাদ তৈরি হয়। যা যে কোনও খাদ্যরসিকের জন্য আজীবন না ভোলা এক স্বাদের মন মাতানো তৃপ্তি দেয়। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button