ঘরের লেপ, কাঁথা, তোষক আলমারিতে তুলে দেওয়ার সময় এসে গেছে। বিন্দু বিন্দু ঘামও জমছে ক্রান্তীয় দেশবাসীর মুখে। শীত জানান দিচ্ছে বিদায় আসন্ন। তবে ইউরোপবাসীর ওপর শীতকাল এবারে একটু বেশি সদয়। অবশ্য কথাটা হওয়া উচিত নির্দয়। ফেব্রুয়ারি থেকেই হাড় কাঁপানো উত্তুরে হাওয়ায় এমনিতেই জমে যাচ্ছিলেন ইউরোপবাসী। ঠান্ডা ঠান্ডা সেই আমেজ যদিও তখনও অবধি যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। কিন্তু মার্চে পা দিতেই শীত একেবারে দৈত্যের চেহারায় থাবা বসিয়েছে গোটা ইউরোপে। তুষার চাদরে ঢাকা পড়েছে রোমের কলোসিয়াম। আবার ইংল্যান্ডের লর্ডসের মাঠের সবুজ রং উধাও হয়ে গিয়ে তা পরিণত হয়েছে বরফ সাদা স্কেটিং মঞ্চে। জার্মানির আলোকোজ্জ্বল ফ্রাঙ্কফুর্ট সাদা বরফের ক্রিমে হারিয়েছে তার জৌলুস। ইউরোপের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে যে দিকে চোখ যায়, শুধু চোখে পড়ছে ধূসর সাদা বরফ। একেবারে নির্জীব, নিষ্প্রাণ জনজীবন। বিগত কয়েক শতাব্দীতে এমন প্রাণহীন ইউরোপকে চোখে দেখেনি কেউই।
কোথাও কোথাও শীতের পারদ ছাড়িয়েছে মাইনাস ৪০ ডিগ্রির ঘর! যার জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজের ঝাঁপ। হু হু করে নামছে পারদ। আগামী ১ সপ্তাহও সেই পারদের উর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। উল্টে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে ইউরোপবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। বাড়তে পারে তুষারপাতের পরিমাণও। উত্তরমেরু ও সাইবেরিয়া থেকে আসা ঝোড়ো গতির কনকনে হাওয়ার বিরামহীন আক্রমণ তো ছিলই। সেই ঝোড়ো হাওয়া শক্তি সঞ্চয় করে আছড়ে পড়বে দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ড, দক্ষিণ ওয়েলস, স্কটল্যান্ড অঞ্চলে। এইসময় বাইরে বার হলেই ‘ফ্রস্ট বাইট’-এর শিকার হবেন বাসিন্দারা। অতএব ঘরের ভিতর এইসময় থাকাটাই সকলের পক্ষে নিরাপদ বলে মনে করছেন আবহবিদরা।
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে রুষ্ট হচ্ছে প্রকৃতি। পাল্টাচ্ছে আবহাওয়ার মেজাজ। বারবার সেই বিষয়ে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তাঁদের সেই সতর্কবাণীর আঁচ গত ৩ দিন ধরে টের পাচ্ছেন ইউরোপবাসী। বরফের উৎপাতে এরমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০-এর কোঠা। বাইরে দৃশ্যমানতা কম থাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে বহু গাড়ি। একে একে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ট্রেন ও বিমান পরিষেবা। রাস্তাঘাট, পার্ক, মাঠ সর্বত্র হুহু করে বাড়ছে বরফের পুরু আস্তরণ। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আবার জারি হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা। এই মারণ ঠান্ডা পার করে কবে দেখা মিলবে বসন্তরাজের? আপাতত সেদিকেই চেয়ে শীতলবন্দি যবুথবু ইউরোপবাসী।