রাজ্য সরকারের লেখা কথাই বিধানসভার অধিবেশনের শুরুতে পাঠ করেন রাজ্যপাল। এটাই রীতি। এটাই চলে আসছে। সেই রীতি ভেঙে কেরালা বিধানসভায় সে রাজ্যের রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের লেখা বক্তব্য পাঠ করেন ঠিকই, কিন্তু মাঝে জানিয়ে দেন তিনি এর সঙ্গে সহমত নন। এই ঘটনার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপালের ভাষণ নিয়ে আশঙ্কার পারদ চড়ছিল।
রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে যে ফাটল তৈরি হয়েছে সেখানে তিনি কতটা রাজ্যের লেখা বক্তব্য পাঠ করবেন তা নিয়ে যথেষ্ট ফিসফাস চলছিল। ফলে শুক্রবার রাজ্য বিধানসভায় বাজেট অধিবেশনের শুরুতে রাজ্যপালের ভাষণের দিকে তাকিয়েছিলেন সকলে। তবে সব জল্পনায় জল ঢেলে চিরাচরিত রীতি মেনে এদিন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর রাজ্যের লেখা ভাষণই হুবহু বিধানসভায় পাঠ করেন।
রাজ্যপালের বক্তব্যে এদিন উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় নীতির বিরোধিতা, সিএএ বিরোধিতা, রাজ্যের সাফল্য, এমনকি গত এক বছরে রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলা যে একদম ঠিক ছিল তাও পাঠ করেন রাজ্যপাল। এদিন রাজ্যপালের বক্তব্য অবশ্য বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে প্রচার করতে দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে বিধানসভায় শাসক দলের বিধায়কেরাও রাজ্যপাল অন্য কিছু বলার চেষ্টা করলে প্রতিবাদের জন্য তৈরি ছিলেন।
শুক্রবার তাঁর ভাষণ পাঠ করার পর এদিন রাজ্যপাল আচমকাই স্পিকারের ঘরে ঢোকেন। সেখানে তিনি হাজির হওয়ার পর সেখানে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী। ৩ জনের মধ্যে প্রায় আধঘণ্টা কথা হয়। তারপর রাজ্যপাল বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যান। রাজ্যপালকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী ও স্পিকার পুষ্পস্তবক রাজ্যপালের হাতে তুলে দেন। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের মধ্যে হাসিমুখে কথাও হয়। তারপর রাজ্যপাল নমস্কার জানিয়ে গাড়িতে উঠে যান।
রাজ্য সরকার রাজ্যপাল সংঘাত যেভাবে দিনের পর দিন বাড়ছিল, যেভাবে রাজ্যপালকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেখা যাচ্ছিল। যেভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজ্যপাল সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগছিলেন তাতে রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের মধ্যে ফাটল বড় হচ্ছিল। অন্যদিকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গেলে বারবার রাজ্যপালকে গো ব্যাক, কালো পতাকার মুখে পড়তে হচ্ছিল। এরমধ্যে এদিনের বাজেট অধিবেশনের ভাষণ নিয়ে যে আশঙ্কার পারদ চড়ছিল তার কিন্তু এদিন লেশমাত্রও ঘটল না। বরং বেশ একটা সৌহার্দ্য পূর্ণ আবহেই শেষ হল রাজ্যপালের বক্তৃতা।