
একেই বোধহয় বলে ওস্তাদের মার। প্রথম দিনেই বাজিমাত করে সকলকে চমকে দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নির্বাচনের আগে তো নয়ই, এমনকি নির্বাচনের মধ্যেও তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পক্ককেশ দুঁদে রাজনীতিবিদ তিনি। কিন্তু বাম-কংগ্রেস জোট হয়ে গেল। সাপে-নেউলে একসঙ্গে গলা জড়াজড়ি করে জোটসঙ্গী তকমা এঁটে প্রচার করল। রাহুল গান্ধীর সভায় বংশগোপাল চৌধুরী, অশোক ভট্টাচার্যের প্রচারে মানস ভুঁইয়া, সব একাকার হয়ে গেল। তবু তিনি ছিলেন নীরবে, নিভৃতে। বাম-কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি তৃণমূলের অন্দরমহলেও কানাঘুষো চলছিল, তবে কী এবার পাম অ্যাভিনিউ থেকে বার হবেন না তিনি? তবে জল্পনায় জল ঢালতে তিনি জানেন। তাই গরমে সেঁকা বিকেলে হুড খোলা গাড়িতে অবশেষে প্রচারে নামলেন তিনি। ঢাকুরিয়া থেকে গড়িয়া, এই রোড-শোয়ের প্রধান আকর্ষণই ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর কার্যত বাণপ্রস্থে যাওয়ার পরও তিনি দল, দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের কাছে কতটা জনপ্রিয় তা এদিন রোড-শোয়ের জনজোয়ার মুখে কিছু না বলেও বুঝিয়ে দিল। এদিনের ভিড় কিছুক্ষণের জন্য শাসকের শিরদাঁড়ায় হিমশ্রোত বইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে লাল পতাকায় মুড়ে যাওয়া রোড শোয়ে বুদ্ধবাবুর ধারে কাছে সেভাবে খুঁজে পাওয়া গেল না কংগ্রেসকে। জোটকে সামনে রেখে বাম ও কংগ্রেস নেতাদের আচমকা গলায় গলায় ভাব জমেছে। প্রকাশ্যে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েও দিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু সেসব থেকে দূরত্ব বজায় রাখারই একটা চেষ্টা এদিন ধরা পড়ল মিছিলে। নিজের কৌলিন্য খোয়াতে যে তিনি অন্তত রাজি নন, তা এদিন হুড খোলা গাড়িতে চুপচাপ দাঁড়িয়েও বুঝিয়ে দিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বাদবাকি বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। পথের দু’ধার জনস্রোতে ভেসে গেছে। মাঝেমধ্যে হাত নেড়েছেন। নমস্কার করেছেন জনতার দিকে চেয়ে। কর্মী, সমর্থকরা শ্লোগান দিয়েছেন। কলরব তুলেছেন। সবই হয়েছে। তবে লাল পতাকার ভিড়ে দু’চারটি বাদে সেভাবে কংগ্রেসকে খুঁজে পাওয়া যায়নি এদিন। অন্তত রাহুল গান্ধী সভায় যেভাবে লাল পতাকার ভিড় দেখা গিয়েছিল, সেভাবে তো নয়ই।