লালগড়ের জঙ্গলে লুকিয়ে বেড়ানো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অবশেষে দেখা পেলেন সকলে। তবে জ্যান্ত নয়। মৃত অবস্থায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের বাগঘোরার জঙ্গলে শুক্রবার বাঘটির নিথর দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিকভাবে জানতে পারা যাচ্ছে বাঘটিকে আদিবাসীরাই বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে মেরে ফেলেছেন। বাঘের দেহে অনেকগুলি ক্ষত চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন বনকর্মীরা। বাঘের পা, কান ও চোখের কাছে গভীর ক্ষত রয়েছে। দেহের বিভিন্ন অংশে লেপ্টে চাপ রক্ত।
এদিন মৃত অবস্থায় জঙ্গলের মধ্যে পড়ে থাকা বাঘের হদিস মেলার পরই চারপাশ থেকে লোকজন হাজির হতে থাকেন। বাঘকে ঘিরে চলে দেদার সেলফি। সঙ্গে ছিল বাঘের পা, লেজ ধরে টানাটানি। কয়েকজনকে উৎসাহের বশে বাঘের লোমও ছিঁড়ে নিতে দেখা যায়। বাঘ ঘিরে ক্রমশ ভিড় এমনভাবে বাড়তে থাকে যে বাঘ উদ্ধার করে নিয়ে যেতে হিমসিম খেতে হয় বনকর্মীদের।
প্রায় দেড় মাস ধরে তার খোঁজ পেতে হন্যে হয়ে তল্লাশি চালিয়েছেন বন দফতরের আধিকারিকরা। ওড়ানো হয়েছে ড্রোন। ডাকা হয়েছে বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু কোনওভাবে ওড়িশা বা দলমা থেকে লালগড়ের জঙ্গলে এসে পড়া পূর্ণ বয়স্ক রয়্যাল বেঙ্গলটির নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় বাঘটিকে দেখতে পান গ্রামবাসীরা। একবার জালে ধরা পড়লেও তা ছিঁড়ে ২ জনকে জখম করে চম্পট দেয় দক্ষিণ রায়। তারপর একবার এ জঙ্গলে তাকে দেখা যায় তো কদিন পর অন্য জঙ্গলে। তবে কী বাঘটি দিশেহারা হয়ে ঘুরছে? বিশেষজ্ঞেরা সে তত্ত্ব মেনে নেন। মেনে নেন বাঘটি এখন চতুর্দিকে মানুষ দেখে আতঙ্কিত। তাছাড়া বাঘবিহীন এ এলাকা তার কাছে অচেনা। সে শান্তিতে কোথাওই থাকতে পারছিলনা। ফলে এ জঙ্গল ও জঙ্গল পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। অসুবিধা হয়নি শুধু খাবারের। প্রচুর বন শূকর থাকায় বাঘের পেট ভরানো নিয়ে চিন্তা ছিলনা। অবশেষে সেই উদভ্রান্ত বাঘকে মরতে হল বেঘোরে।
এখানেই কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণ নিয়ে নানা কর্মকাণ্ড চলছে। তাছাড়া বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের আওতায় পড়ে বাঘের সংরক্ষণ। সেখানে দেড় মাস ধরে কেন বন দফতর কিছু করতে পারল না? কেনই বা এভাবে একটি বাঘকে মরতে হল? তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে বন দফতরের চরম ব্যর্থতা নিয়েও।