দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির নয়াপাড়ায় ১০ নং বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী আসিফ আলি গাজি। সেসময়ে বুথের মধ্যেই তাঁকে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ। গুলি লাগে বুকে। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর। তৃণমূলের তরফে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে এসইউসিআইয়ের দিকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় র্যাফ ও বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছয়।
নদিয়ার শান্তিপুরে একটি বুথে সকালে উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ বুথে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছিল সঞ্জিত প্রামাণিক নামে এক যুবক। সেই সময়ে গণপিটুনির শিকার হয় বহিরাগত ওই যুবক। মারে চোটে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সঞ্জিতের।
দুপুরে নদিয়ার নাকাশিপাড়ার বিলকুমারীতে এক বৃদ্ধের বোমা ও গুলির আঘাতে মৃত্যু হয়। মৃতের নাম ভোলা শেখ দফাদার। ৬২ বছরের ওই ব্যক্তি ভোট দিতে বুথের দিকে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ সেই সময়ে সিপিএম ও নির্দল কর্মীদের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের বোমা গুলির লড়াই চলছিল। তারমধ্যে পড়ে যান তিনি। তাঁর গায়ে গুলি ও বোমা লাগে। আহত হন আরও বেশ কয়েকজন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ভোলা শেখের মৃত্যু হয়। তৃণমূলের দাবি মৃত ব্যক্তি তাদের কর্মী ছিলেন।
নদিয়ার তেহট্টের বেতাই পঞ্চায়েতে ভোট চলাকালীন তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয়দের দাবি, সেসময়ে ভোট দিয়ে ফিরছিলেন কৃষ্ণপদ সরকার নামে এক ব্যক্তি। তিনি সেই সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাঁকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে শক্তিনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। স্থানীয়দের দাবি, কোনও দলের কর্মী নন কৃষ্ণপদবাবু। তিনি একজন সাধারণ ভোটার মাত্র।
উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার পাঁচপোতা এলাকায় সকাল থেকে তৃণমূল কর্মীরা ভোট দিতে দিচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠছিল। এই নিয়ে অবস্থা ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছিল। এই সময়ে ওই বুথে ভোট দিতে যাচ্ছিলেন সিপিএম কর্মী তৈবুর গায়েন। সেইসময়ে বোমাবাজি হয়। বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তৈবুর গায়েনের। আহত হন ২ সিপিএম কর্মী। যদিও তৃণমূলের তরফে বোমাবাজি সহ বুথ জ্যামের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মুর্শিদাবাদেও। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় গুলি বোমা নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। তৃণমূল বিজেপি সংঘর্ষ বাধে বলে খবর। এই ঘটনায় বোমা, গুলির আঘাতে মৃত্যু হয় এক বিজেপি কর্মীর। মৃতের নাম তপন মণ্ডল। ঘটনার জেরে এলাকায় প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দেহ ঘিরে গ্রামে বিক্ষোভ শুরু হয়। হাজির হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী।
দুপুরে মুর্শিদাবাদের নওদার শ্যামনগরের বুথে ছাপ্পা ভোট চলছে বলে অভিযোগ ওঠে। বাধা দিতে যান শাহিন শেখ নামে এক যুবক। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তার বচসা শুরু হয়। অভিযোগ সেই সময়ে শাহিনকে লক্ষ করে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় শাহিন শেখকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের ২ নম্বর ব্লকের হাঁসচড়ায় এদিন দুপুরে একটি বুথের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বেশ কয়েকজন ভোটার। অভিযোগ সে সময়ে সেখানে হাজির হয় একটি সশস্ত্র দুষ্কৃতী বাহিনী। তারা সব ভোটারকে ফিরে যেতে বলে। আতঙ্কে কেউ কেউ ফিরে গেলেও ২ নির্দল সমর্থক যোগেশ্বর ঘোষ ও অপু মান্না ভোট না দিয়ে সেখান থেকে যাবেননা বলে সাফ জানিয়ে দেন। অভিযোগ এ নিয়ে বচসা শুরু হয়। তারপরই তাঁদের ২ জনকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। গ্রামবাসীরা ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁদের অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যদি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব।
দক্ষিণ দিনাজপুরেও পঞ্চায়েত নির্বাচনের বলি হলেন ১ জন। তিনি ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির কর্মী। নাম বিশ্বনাথ টুডু। এদিন বিকেল ৩টে নাগাদ গঙ্গারামপুরের সুখদেবপুরে একটি বুথের কাছেই তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। অভিযোগ সেই সময়ে তাঁকে লক্ষ্য করে প্রথমে তির ছোঁড়া হয়। পরে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। আহত বিশ্বনাথ টুডুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। ঘটনায় শাসক দলের দিকে আঙুল তুলেছে ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি।
কোচবিহারের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি বুথে এদিন দুপুরের দিকে ভোট দিতে যান দুলাল ভৌমিক নামে এক ব্যক্তি। দীর্ঘক্ষণ বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর তিনি খবর পান ভিতরে নাকি ছাপ্পা চলছে। ক্ষুব্ধ দুলালবাবু প্রতিবাদ করেন। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তাঁর বচসা বাধে। বচসার জেরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁর মৃত্যু হয়।
কাকদ্বীপে গত রাতে এক সিপিএম কর্মীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় সিপিএম কর্মী দেবু দাস ও তাঁর স্ত্রীর। এই ঘটনায় তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছে সিপিএম। যদিও তৃণমূলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, শর্টসার্কিট থেকেই আগুন লাগে বাড়িতে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দম্পতির। এতে তাঁদের কোনও হাত নেই।