জোড় হাত করলেন শিক্ষক। চোখে জল এল ছাত্রদের। তারপর তারা বলল, তাহলে আপনি যান স্যার। আমরা আর আপনাকে আটকাব না। শিক্ষক হিসাবে এর থেকে বড় পাওনা আর কি হতে পারে যা পেলেন বীরভূমের দুবরাজপুরের মেটেলা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তপন দাস।
স্কুলের ইংরাজি শিক্ষক তপন দাসকে তাঁর শিক্ষকতার জন্যই ভালবাসে ছাত্ররা। ভালবাসাটা শুধু শিক্ষকতার জন্য না, সমস্ত পড়ুয়ার জন্য তাঁর শিক্ষক সুলভ স্নেহ ও দায়িত্ববোধের জন্যও অনেকটা। বাড়ির বাইরে স্কুলে এসে তিনি যেন পড়ুয়াদের কাছে বাবা-মায়ের মতো একজন আশ্রয়ের জায়গা ছিলেন। তাই দীর্ঘদিন ধরেই পড়ুয়াদের অনুরোধে স্কুল পরিচালনা সমিতি আটকে রেখেছিল তাঁর স্থানান্তর।
বর্ধমানের গলসি থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার প্রতিদিন পাড়ি দিয়ে দুবরাজপুরে শিক্ষকতা করতে আসতেন তপনবাবু। গত ১১ বছর ধরে সময় দিতে পারেন না নিজের সন্তানকে। তাই সমঝোতাপূর্ণ স্থানান্তরের আবেদন জানান। আবেদন মঞ্জুর হলে বেঁকে বসে তাঁরই সন্তানতুল্য পড়ুয়ারা। তপন স্যার সত্যিই আর আসবেন না স্কুলে সেটা যেন বিশ্বাসই হয়নি তাদের। তাই সোমবার স্কুলের বাইরে শিক্ষককে না যাওয়ার আর্জি জানিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে সার বেধে দাঁড়িয়ে পড়ে কিশোরের দল।
শেষ পর্যন্ত তপনবাবু হাত জোড় করে তাদের কাছে আবেদন জানান যে এতদূরে এসে কাজ করা সত্যিই আর সম্ভব হচ্ছে না। একমাত্র সন্তানকে একটু সময় দেওয়ার কথাও জানান তিনি পড়ুয়াদের। এরপর আর কিছু বলার ছিল না পড়ুয়াদের। সসম্মানে তারা শিক্ষককে স্কুল থেকে ‘ছুটি’ দেয়।