যথেষ্ট জট পাকানো ঘটনা ছিল। পাওয়া গিয়েছিল কেবল দেহ। মুণ্ড, হাত, পা নেই। নেই মোবাইল। কে বা কারা এভাবে বন্ধন ব্যাঙ্কের লোন রিকভারি এজেন্ট পার্থ চক্রবর্তীকে খুন করল তার কিনারা করাটা মুখের কথা ছিল না। কিন্তু সেই জটিল কেসের মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কিনারা করে দেখাল হাওড়া পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্তকে। এদিন হাওড়া পুলিশের তরফে জানানো হয়, পার্থ চক্রবর্তীকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় সামসুদ্দিন নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
শনিবার হাওড়ার পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা জানান, পার্থ চক্রবর্তীর ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য ৫ জায়গায় যাওয়ার ছিল। বন্ধন ব্যাঙ্ক মাইক্রো ফাইনান্স করে থাকে কিছু গ্রুপকে। যেখানে মহিলাদেরই লোন দেওয়া হয়। স্বনির্ভর প্রকল্পে এই লোন দেওয়া হয়ে থাকে। দেখা যায় চতুর্থ ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায়ের পর পঞ্চম জনের কাছে পার্থ চক্রবর্তী যাননি। এদিকে মাকড়দহের কাছে রাঘবপুরে বাঁশবনের ধার থেকে পার্থবাবুর যে বস্তাবন্দি দেহটি উদ্ধার হয়, সেই বস্তার মধ্যে বেশ কিছু ছিট কাপড়ের টুকরো পায় পুলিশ। সেই টুকরোতে এক সংস্থার ট্যাগ দেখতে পান তাঁরা। সেই সংস্থায় হানা দেয় পুলিশ। ওই জামাকাপড়ের সংস্থার মালিক পুলিশকে জানান, তিনি এই কাজ বেশ কিছু দর্জিকে দিয়ে করিয়ে আনেন। যে ট্যাগ পুলিশ দেখায় সেই ট্যাগ দেখে চিনি তিনি জানান, ওই ট্যাগ তিনি সামসুদ্দিন নামে এক দর্জিকে দিয়েছিলেন। এদিকে পুলিশ জানতে পারে সামসুদ্দিনের নিজের নামে কোনও ঋণ না থাকলেও তার মায়ের নামে দেড় লক্ষ টাকার একটি ঋণ রয়েছে। যে টাকা আদপে সেই কাজে লাগাত। দীর্ঘদিন ধরে সে ব্যাঙ্কের টাকা শোধও দিচ্ছিলনা।
পুলিশ সামসুদ্দিনকে এদিন আটক করে জেরা শুরু করে। তাতে পুলিশ জানতে পারে সামসুদ্দিনের যে কাজের ঘর সেখানেই পার্থ চক্রবর্তীর সঙ্গে ঋণের টাকার কিস্তি শোধ করা নিয়ে তার বচসা হয়। বচসা চরমে পৌঁছলে এক সময়ে সে একটি বাঁশ দিয়ে পার্থবাবুর মাথায় আঘাত করে। অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এরপর তার মুণ্ড কেটে নেয় সামসুদ্দিন। প্রমাণ লোপাট করতে হাত-পাও কেটে নেয়। তারপর একটি বস্তায় দেহটি পুরে মাকড়দহে ফেলে আসে। অন্য বস্তায় মুণ্ড, হাত ও পা পুরে বাইকে করে গিয়ে ফেলে আসে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর অঙ্কুরহাটি নামে একটি জায়গায়। তার কথামত সেখান থেকে পরে দেহাংশ বন্দি বস্তা উদ্ধারও করে পুলিশ। এদিকে খুন হওয়ার আগে ৪টি ঋণের কিস্তি পার্থবাবু সংগ্রহ করেছিলেন। অঙ্কটা ছিল ৩ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা। সেই টাকা সামসুদ্দিনের বাড়িতে খোঁজ করে পেয়েছে পুলিশ। গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে। আর বিভিন্ন বিষয়ে পরিস্কার হওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। তবে এমন এক খুনের কিনারা করতে পারা হাওড়া পুলিশের একটা বড় সাফল্য হিসাবেই ধরা হচ্ছে।