বনগাঁ পুরসভার আস্থা ভোট ঘিরে চরম অশান্তি ছড়াল বনগাঁ পুরসভার সামনে। পুলিশকে লক্ষ্য করে হল ইটবৃষ্টি। পড়ল বোমা। হল ভাঙচুর। একেবারে রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি সৃষ্টি হল সেখানে। পাল্টা পুলিশও লাঠিচার্জ করে। ২২ আসনের বনগাঁ পুরসভার ১২ জন কাউন্সিলর বিজেপি-তে যোগদান করার পর পুরসভায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এঁদের মধ্যে ৩ জন কাউন্সিলর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে আস্থা ভোট চান। সেই আস্থা ভোট হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার বিকেল ৩টেয়। তার আগেই পুরসভায় আস্থা ভোটের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যান তৃণমূলের ৮ কাউন্সিলর ও ১ জন কংগ্রেস ও ১ জন নির্দল কাউন্সিলর। কংগ্রেস ও নির্দল কাউন্সিলরও তৃণমূলকেই ভোট দেবেন বলে জানা যায়। এদিকে বাইকে তখন ধুন্ধুমার পরিস্থিতি।
পুরসভার বাইরে প্রতিটি রাস্তা ব্যারিকেড করে আটকে দেয় পুলিশ। ব্যারিকেডের ঘেরাটোপের ওপাশে একদিকে জড়ো হন তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। অন্যদিকে জমা হন বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা। মাঝে ছিল পুলিশ। এই অবস্থায় বিজেপির ৯ জন কাউন্সিলর পুরভবনে ঢুকে পড়েন। কিন্তু যে ৩ জন অনাস্থা আনেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যের বিরুদ্ধে তাঁরা তখনও ঢোকেননি। বিজেপির অভিযোগ তাঁদের ৩ জনকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এদিকে এই ৩ জনের মধ্যে ২ জন কাউন্সিলর হিমাদ্রি মণ্ডল ও কার্তিক মণ্ডলের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা রয়েছে। তাই ওই ২ জনকে ঢুকতে দিচ্ছিলনা পুলিশ। তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরাও এঁদের ২ জনকে যেন ঢুকতে দেওয়া না হয় সেই দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিল।
হিমাদ্রি মণ্ডল ও কার্তিক মণ্ডলের অবশ্য দাবি তাঁদের কাছে হাইকোর্টের নির্দেশ আছে। তাঁদের ঢুকতে দিতে পুলিশ বাধ্য। যদিও পুলিশ তাঁদের জানাতে থাকে যতক্ষণনা হাইকোর্টের বৈধ কাগজ তাঁরা পাচ্ছেন ততক্ষণ তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হবে না।এই নিয়ে চূড়ান্ত উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় পুরসভার বাইরে। অন্যদিকে বিজেপির দাবি তাঁদের যে ৯ কাউন্সিলর ভিতরে প্রবেশ করেছেন পুরসভার একটি ঘরে তাঁদের তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তাঁদেরও ভোটাভুটিতে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছেনা।
পুরসভার ভিতরে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর সওয়া ৩টের সময় অবশেষে যে ৩ বিজেপি কাউন্সিলর অনাস্থা আনেন তাঁরাই উপস্থিত না থাকায় চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য ১০ জন উপস্থিত কাউন্সিলরের ভোটে জিতে যান। তিনি বাইরে এসে এমনই দাবি করেন। উল্লাসে মেতে ওঠেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা।
এই খবর পেতেই বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু করেন। পুরসভায় ভাঙচুরের চেষ্টা হয়। বোমাও পড়ে। অবস্থা সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। কাঁদানে গ্যাসের সেলও ফাটায়। ধুন্ধুমার লেগে যায় গোটা চত্বরে। শুরু হয় বিজেপি কর্মী সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ। নামে ব়্যাফ। বেশ কিছুক্ষণ এই পরিস্থিতি চলার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। পরে ১২ জন বিজেপি কাউন্সিলর সাংবাদিক বৈঠক করে পাল্টা দাবি করেন তাঁরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ। তাই বোর্ড তাঁদেরই। তাঁরা এই বিষয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানান বিজেপি কাউন্সিলররা।