বারাসতের হৃদয়পুরে ট্রাভেল এজেন্সির কর্মী অনুপম হাজরার হত্যাকাণ্ডে তাঁর স্ত্রী মনুয়া মজুমদার ও মনুয়ার প্রেমিক অজিত রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল বারাসত চতুর্থ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। শুক্রবার তাদের সাজা ঘোষণা করল আদালত। দুজনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা। জরিমানার টাকা না দিতে পারলে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড। যদিও এই সাজা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না অনুপমের মা থেকে তাঁর বন্ধু বান্ধব পরিজনেরা। সাজা শুনে আদালতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন অনুপমের মা।
তিনি চেয়েছিলেন সর্বোচ্চ সাজা। অর্থাৎ তাঁর ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসির সাজা চেয়েছিলেন অনুপমের মা। সে কথা তিনি বারবারই বলে এসেছেন। কিন্তু এদিন যখন দুজনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে বলে শোনেন তখন তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রথমে হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন তিনি এ বিষয়ে আর কোনও কথা বলতে চান না। পরে জানান সঠিক বিচার তিনি পাননি। এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে যাবেন। সেখানে দোষী দুজনের সর্বোচ্চ সাজা চাইবেন তিনি।
অনুপমের মা যখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তখন আদালত চত্বরে উত্তেজনা। অনুপম সিংহের আত্মীয় বন্ধুরা সাজা মেনে নিতে না পেরে সোচ্চার হন। অভিযোগ এই সময়ে এক আইনজীবীকে অনুপমের বন্ধুরা মারধরও করেন। পাল্টা অনুপমের আত্মীয়দের দাবি আইনজীবীদের কয়েকজন অনুপমের এক বন্ধুকে মারধর করছিলেন। এই নিয়ে দুপক্ষে অশান্তি শুরু হয়। পুলিশের সঙ্গেও অনুপমের আত্মীয় বন্ধুদের ধস্তাধস্তি হয়। পরে অনুপমের ২ বন্ধুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
যাদের সাজা হল তারা কিন্তু এদিনও আদালতে ভাবলেশহীন ছিল। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাদের যেমন দেখা গিয়েছিল, এদিনও তাই। গত ২০১৭ সালের ২ মে অনুপম সিংহ খুন হন। পুলিশ তদন্তে নামে। সেই ঘটনার ১৩ দিন পর অনুপমের স্ত্রী মনুয়া মজুমদার ও তার প্রেমিক অজিত রায়কে গ্রেফতার করা হয়। অনুপমকে খুন অজিতই করে বলে জানতে পারে পুলিশ। সে সময় মনুয়া তার বাপের বাড়িতে থাকলেও ফোনে সরাসরি স্বামীর আর্ত চিৎকার শুনতে চায় অজিতের কাছে। অনুপমের বাড়িতে লুকিয়ে থাকা অজিত অনুপম বাড়িতে ঢুকলেই তাঁকে ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। সেই ঘটনায় শুক্রবার দুজনের যাবজ্জীবন সাজা হল।