আশপাশের বেআইনি বাজি কারখানা থেকে বাজেয়াপ্ত বাজি ও বাজির মশলা নিষ্ক্রিয় করতে তা কয়েকদিন ধরেই গঙ্গার ধারে পুড়িয়ে দিচ্ছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবারের মেঘলা দুপুরেও তাই করে তারা। কিন্তু সেই মশলায় আগুন দিতেই তা যুদ্ধে বোমা পড়ার মতন করে বিকট গর্জন করে ফাটে। ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণ হয় নৈহাটির রামঘাটের কাছে। আর তার জেরে নৈহাটি তো বটেই গঙ্গার উল্টো পাড়ে চুঁচুড়ার অনেক বাড়ির কাচ ভেঙে যায়। বাড়িতে ফাটল ধরে। আর নৈহাটির বহু বাড়ির তো ক্ষতি হয়ই। বাড়ির চাল উড়ে যায়। বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। বাড়িতে ফাটল ধরে। বেশ কয়েকজন ভাঙা অংশে চোট পান। যারমধ্যে শিশুও রয়েছে।
এই ঘটনার পর জনতার ক্ষোভ ফেটে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী খবর পেয়ে ঘোষণা করেন যাঁদের বাড়ির ক্ষতি হয়েছে তাঁদের তা সারিয়ে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার ঘটনার পর বিস্ফোরণস্থল ঘিরে দেয় পুলিশ। শুক্রবার সেখানে দেখা যায় এক বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে। গঙ্গার ধারেই প্রায় ৯-১০ ফুটের বিশাল সেই গর্ত দেখে মনে হচ্ছে যেন উল্কাপাত হয়েছে। আশপাশে ছড়িয়ে আছে প্রচুর বাজির খোল, রুপোলী রঙয়ের রাসায়নিক পদার্থের গুঁড়ো।
শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে হাজির হন নৈহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান। স্থানীয় মানুষের ক্ষয়ক্ষতিরও খবর নেন তিনি। যাঁদের বাড়ি থাকার অযোগ্য হয়ে গেছে তাঁদের অন্যত্র থাকার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়। এছাড়াও আসেন পুলিশের বম্ব স্কোয়াডের বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা বিস্ফোরণস্থল খতিয়ে দেখেন। প্রয়োজনীয় মাপজোক করেন। নমুনা সংগ্রহ করেন। সিআইডি-র একটি দলও ছিল সঙ্গে। তারাও পুরো জায়গা খতিয়ে দেখে। ছবি তোলা হয়। ভিডিও করা হয়। এদিকে ঘটনার পর আতঙ্কে অনেক পরিবার বাড়ির বাচ্চাদের আত্মীয়দের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
নৈহাটির ঘটনায় শুক্রবার এলাকায় যায় কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল। তারা গোটা এলাকা পরিদর্শন করে। কথা বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে। অন্যদিকে বিজেপির তরফে এই ঘটনার এনআইএ তদন্তের দাবি করা হয়েছে। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা এই বিস্ফোরণকে কেবল বাজির মশলার বিস্ফোরণ হিসাবে নিতে নারাজ। তিনি মনে করেন এখানে বাজির মশলার আড়ালে আরডিএক্স থেকে থাকতে পারে। যে ধরণের বিস্ফোরণ হয়েছে তাতে তিনি খাগরাগড় প্রসঙ্গও টেনেছেন। বিজেপি নেতা মুকুল রায় এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করেছেন। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন তোলেন এভাবে বাজির বেআইনি কারবার চলছিল এতদিন দেখা হয়নি কেন? এই ঘটনাকে শান্তির জন্য বিপজ্জনক বলে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।