স্ত্রী, পুত্রকে খুন করে আত্মঘাতী হবেন তিনি। বাড়িতে বসে আলোচনা করে সহমতের ভিত্তিতে সেটাই স্থির হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল প্রথমে তিনি স্ত্রী তন্দ্রাকে কোপাবেন। তারপর ছেলে সুমনকে। অবশেষে নিজেকে শেষ করে দেবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ।
ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর চারটে। আর কিছুক্ষণ পরই আঁধার কেটে পূব আকাশে উঁকি দেবে সূর্যের হাল্কা কিরণ। সেই মাহেন্দ্রক্ষণেই প্রথমে নিজের স্ত্রীকে ধারালো ছুরি দিয়ে হাতে ও গলায় আঘাত করেন সোদপুরের বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর প্রাণের চেয়েও প্রিয় ছেলের হাতে কোপ মারেন তিনি। এরপর নিজেকে রক্তাক্ত করে ঘরে গলায় দড়ি দেন। পুরো ঘটনাই ঘটে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী। একটি সুইসাইড নোটও লিখে যান বিপ্লববাবু। যেখানে লেখা ছিল এই মৃত্যুর সঙ্গে কারও যোগ নেই।
নিজের সুইসাইড নোটেও সন্তানের জন্য শেষবারের জন্য ভাল কথা লিখে যান তিনি। লিখে যান সুমন খুব ভাল ছেলে। যদিও পুরো ঘটনায় বিপ্লববাবুর মৃত্যু হলেও বেঁচে গেছেন তাঁর স্ত্রী ও পুত্র। দুজনেই আহত অবস্থায় খড়দহের একটি হাসপাতালে ভর্তি। সেখানে শুয়ে এই পুরো পরিকল্পনা ও ঠিক কী কী ঘটেছিল সেদিন, তা পুলিশকে জানিয়েছেন বিপ্লববাবুর ছেলে বছর ৩৫-এর সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, গণিতে স্নাতক ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য বাজারে বহু টাকা দেনা করে ফেলেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার রাতে তিনি জানতে পারেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটে গবেষণার কাজ করার জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি সুমন। একে চতুর্দিকে দেনা। পাওনাদাররা বাড়ি বয়ে এসে হুমকি দিচ্ছে। রাস্তায় বার হওয়া দায়। দেখলেই টাকা চাইছেন পাওনাদারেরা। ছেলের অনেক বয়স হলেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ হারিয়েছেন।
সবকিছু মিলিয়ে ভয়ংকরভাবে মানসিক অবসাদে জর্জরিত হয়ে পড়েন বিপ্লববাবু। তাঁর ছেলে সুমনের দাবি, এরপরই তাঁরা তিনজনে বসে আত্মহত্যার পরিকল্পনা স্থির করেন। মর্মান্তিক এই ঘটনার পর সোদপুরের নীলগঞ্জ রোডের ওই আবাসনেও শোকের ছায়া নেমে আসে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।