উত্তরে বৃষ্টি কমলেও দুর্ভোগ অব্যাহত। কোথাও ভাঙছে সেতু, কোথাও নদীর বয়ে আনা অতিরিক্ত জল ঢুকে পড়ছে শহরে গ্রামে। জলের তলায় ট্রেন লাইন। রেল কর্তৃপক্ষ এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছে শুক্রবারের আগে উত্তরবঙ্গমুখী কোনও ট্রেন চালাবে না তারা। অনেক জায়গায় সড়ক খরস্রোতা নদীর চেহারা নিয়েছে। এই বাজারে দুহাতে অর্থ রোজগার করছে বিমান সংস্থাগুলি। দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গ উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম এখন বিমান। ফলে কলকাতা থেকে বাগডোগরার ৩ হাজারি টিকিট বিকচ্ছে ১৫ হাজারে।
গত মঙ্গলবার সারারাত বৃষ্টি হয়েছে একটানা। ফলে মালদহের বিস্তীর্ণ এলাকায় নতুন করে জল ঢুকেছে। মহানন্দার জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। ইতিমধ্যেই মহানন্দায় হলুদ সতর্কতা জারি করেছে সেচ দফতর। এদিকে মহানন্দার জলে ইংরেজবাজার সহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা বানভাসি চেহারা নিয়েছে। অনেক গ্রাম জলের তলায় চলে গেছে। বানভাসি হরিশ্চন্দ্রপুর, চাঁচোল, বালুরচর। বহু গ্রাম এখানে জলের তলায়। বামনগোলাতে পুনর্ভবা নদীর জল ঢুকে অবস্থা শোচনীয় করে তুলেছে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের অবস্থাও ভয়ংকর। আত্রেয়ী ও পুনর্ভবা নদী ফুঁসছে। নতুন করে জল ঢুকছে অনেক এলাকায়। গঙ্গারামপুর, বালুরঘাটের অবস্থার কোনও উন্নতি নেই। বহু গ্রাম জলের তলায়। ফসলের চরম ক্ষতি হয়েছে। টাঙ্গন নদীর জল বেড়ে বানভাসি বংশীহারি। গ্রামের পর গ্রাম জলের তলায় চলে যাওয়ায় রাজ্য সড়কের ওপর ত্রিপল খাটিয়ে কোনওক্রমে দিন কাটাচ্ছেন আর্ত মানুষজন। জাতীয় সড়ক সামান্য উঁচু হওয়ায় এখানে জল নেই। তবে তার আশপাশে যতদূর চোখ যায় জল আর জল। বংশীহারিতে ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ জমছিলই। এদিন বংশীহারি বিডিও অফিসে ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান বহু মানুষ। সেসময়ে একটি লরিতে ত্রাণের সামগ্রি তোলার সময়ে তা লুঠও হয় বলে অভিযোগ। এদিন জেলার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্যা পরিদর্শনে গিয়ে তাঁকেও মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।
উত্তর দিনাজপুরে জলের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে মাথায় হাত পড়েছে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বিকল্প রাস্তার ওপর চুনামারি সেতু এদিন জলের তোড়ে ভেঙে পড়ে। কুলিক নদীর বাঁধ ভেঙে ইটাহারের বিশাল এলাকা নতুন করে জলমগ্ন।
কোচবিহারে জল নামতে শুরু করলেও দুর্ভোগ অব্যাহত। বাড়িঘর ছেড়ে বাধ্য হয়ে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর আশ্রয় নিয়েছে বহু পরিবার। বানভাসি এলাকায় বাড়ছে পানীয় জলের সমস্যা। এদিকে সড়ক ও ট্রেন যোগাযোগ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ায় কোনও খাবার উত্তরের জেলাগুলিতে ঢুকছে না। ফলে খাবারের যোগান নিয়ে ক্রমশ সমস্যা জটিল আকার নিচ্ছে।